Tuesday, November 26, 2013

বই নোটঃ-১.(হেদায়াত)

                                                                 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
বইটির প্রকৃত নামঃ                                       ‘‘হেদায়াত’’
লেখকঃ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী (পাকিস্তান)
অনুবাদকঃ মুহাম্মদ আব্দুর রহিম
প্রকাশকঃ আধুনিক প্রকাশনী (ঢাকা)
স্বত্ত্বাধিকারীঃ বাংলাদেশ ইসলামীক ইনিষ্টিটিউট

                                                                    হেদায়াত
    হেদায়াত শব্দের অর্থ ঃ
১.    হেদায়াত শব্দটি আরবী, কুরআনে শব্দটি বিভিন্ন অর্থে মোট ৩১৪ বার এসেছে।
২.    পথ দেখানোর কাজটিকে বলা হয় হেদায়াত বা পথ দেখানো বা প্রদর্শন করা।
৩.    যে পথ দেখায় তাকে -        হাদী-বলে, ইংরেজীতে গাইড বলে, যেমন- কুরআনকে হুদা বলে।
৪.    যে পথ পেয়ে যায় তাকে -    মাহ্দী-বলে, যেমন- ইমাম মাহদী আসবে আমাদের মাঝে।
৫.    হেদায়াতের বিপরীত শব্দ -    হলো-দালালা বা গোমরাহী, বাকারা-১৭৫।
    অতএব হেদায়াত অর্থ ঃ
১.    অন্ধ ব্যক্তিকে আলোর সন্ধ্যান দেয়া।
২.    পথ হারা ব্যক্তিকে পথ ধরিয়ে দেয়া।
৩.    পথ পাওয়া ব্যক্তিকে তার গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করা।
    হেদায়াত শব্দের ২টি অর্থ ঃ
১.    ইরা আতুত্ ত্বারিক-        পথ দেখানো।
২.    ইছাল ইলাল মাতলুব-        গন্তব্য স্থানে পৌঁছিয়ে দেয়া (ইসালে ছাওয়াব)।
    হেদায়াত বা পথ প্রদর্শন দ্বারা কোন পথ বুঝানো হয়েছে ঃ
১.    দ্বীন ইসলাম, মায়েদা- ৩।
২.    সিরাতুল মুস্তাকীম, আনআম- ১৬১।
৩.    সত্য ও কল্যাণের পথ, সফ- ১০।
৪.    যুগেযুগে নাবী রাসুলদের পথ, তাওবা- ৩৩।
৫.    জান্নাতের পথ, আনকাবুত- ৬৯।
    হেদায়াত সম্পর্কে কুরআন ঃ
১.    হেদায়াতের মালিক-মহান আল্লাহ তায়ালা, আনআম- ৭১।
২.    আল্লাহ যাকে গুমরাহ করেন তাকে কেউ হেদায়াত করতে পারে না, আরাফ- ১৮৬।
৩.    আল্লাহ মানব জাতিকে হেদায়াত ও গুমরাহীর ২টি পথই প্রদর্শন করেছেন, ইনসান- ৩।
৪.    কেউ ইচ্ছা করে বা জোর করে কাউকে হেদায়াত করতে পারবে না, কাসাস- ৫৬।
৫.    যারা হেদায়াতের জন্য চেষ্টা করে আল্লাহ তাদের হেদায়াত দান করেন, আনকাবুত- ৬৯।
৬.    যাকে হেদায়াত করেন তার বক্ষদেশ আল্লাহ উন্মূক্ত করে দেন, আনয়াম- ১২৫, জুমার- ২২।
বইটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও গুরুত্ব
পরিচয় ঃ
    ১৯৫১ সালে ১৩ নভেম্বর করাচিতে জামায়াতে ইসলামীর চারদিন ব্যাপী বার্ষিক সন্মেলনের সমাপনী  অধিবেশনে প্রদত্ত মাওলানা মওদুদীর নসিহত বা ভাষণ।
    পরবর্তিতে আন্দোলনের কর্মীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে ১৯৮৩ সালে ইহা বই
আকারে হেদায়াত নাম দিয়ে প্রকাশ করা হয়।                                                                                
গুরুত্ব ঃ- অনেকের মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়-
১.    আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক আছে কিনা।
২.    থাকলে বা কতখানি আছে।
৩.    আল্লাহর সাথে সর্ম্পক স্থাপনের তাৎপর্য কি ?
৪.    আল্লাহর সাথে সম্পর্ক কি ধরণের হবে।
৫.    আল্লাহর সাথে সম্পর্ক জানার উপায় কি ?
         মাওলানা মওদুদী এই প্রশ্নগুলোর সুন্দর একটি ধারণা বা জবাব দেয়ার জন্যই বিষয়টি বেছে নিয়েছেন।

                                                                                                                                       

    বইয়ের সূচীপত্র



ক্রম    বিবরণ    পৃষ্ঠা
১.        আল্লাহর সাথে সম্পর্ক   
২.        আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের অর্থ   
৩.        আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির উপায়   
৪.        আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বিকাশ সাধনের উপায়   
৫.        আল্লাহর সাথে সম্পর্ক যাচাই করার উপায়   
৬.        আখেরাতকে অগ্রাধিকার দান   
৭.        আখেরাতের চিন্তার লালন   
৮.        অযথা অহমিকা বর্জন   
৯.        ট্রেনিং কেন্দ্র সমুহের উপকারীতা   
১০.        নিজের ঘর সামলানো   
১১.        পারষ্পরিক সংশোধন ও এর পন্থা   
১২.        পারষ্পরিক সমালোচনার সঠিক পন্থা   
১৩.        আনুগত্য ও নিয়ম শৃংখলা   
১৪.        জামায়াত নেতৃবৃন্ধের প্রতি উপদেশ   
১৫.        বিরুধীতা   
১৬.        দাওয়াতের সংক্ষিপ্ত কোর্স   
১৭.        মহিলা কর্মীদের প্রতি উপদেশ   


















১. আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ঃ
১.    সম্পর্কের কারণ বা গুরুত্ব
২.    যে কোন কাজের প্রেরণার উৎস
৩.    সম্পর্কের পরিমান কি হবে
৪.    সম্পর্কের তাৎপর্য ও স্বরূপ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ক্ষতি
১.    সম্পর্কের কারণ বা গুরুত্ব
    নবী-রাসুল (সা) ও খোলাফায়ে রাশেদীনসহ জাতীয সৎ ব্যক্তিরা এর গুরুত্ব বলেছেন।
    জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা (আকীদা-বিশ্বাসে আল্লাহর প্রতি ঈমান, ইবাদাতের বেলায় নিবিড় সম্পর্ক, নৈতিক চরিত্রে ভয় পোষণ, আচার ব্যবহার ও লেনদেনে)।
    আন্দোলনের সফলতা ও দূর্বলতা আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্কের ভিত্তিতেই হবে।
২.    যে কোন কাজের প্রেরণার উৎস
    প্রেরণা আসে উদ্দেশ্য থেকে। যেমন-
    অনেকে সন্তান-সন্ততির কল্যাণের জন্য নিজের দুনিয়া আখেরাত বরবাদ করতে প্রস্তুত হয়।
    দেশ-জাতির খেদমতে আতœ নিয়োগকারী আযাদীর জন্য প্রাণ বিসর্জন দিতেও কুন্ঠিত হয় না।
৩.    সম্পর্কের পরিমান কি হবে
    পরিবার, দেশ ও জাতির চেয়ে সম্পর্ক বেশী না হলে আন্দোলন অগ্রসর হবে না।
    যাবতীয় কাজের আশা ভরসার কেন্দ্র বিন্দু হবে আল্লাহর সাথেই সম্পর্কীত।
    সম্পর্ক  হ্রাস না পেয়ে ক্রমশঃ বৃদ্ধির চিন্তাই সর্বদা জাগরুক রাখা দরকার।
    আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনই আমাদের কাজের মূল প্রাণ স্বরূপ। 
৪.    সম্পর্কের তাৎপর্য ও স্বরূপ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ক্ষতি
    সম্পর্ক আছে কিনা।
    থাকলে কতখানি আছে।
    স্থাপনের তাৎপর্য কি ?
    সম্পর্ক কি ধরণের হবে।
    সম্পর্ক জানার উপায় কি ?
    এ সকল বিষয়ের উত্তর জানা না থাকার কারণে ক্ষতি হচ্ছে ৩ টি ঃ যথা -
    নিজেকে মরুভুমির মত মনে হয়।
    নিজেকে অসহায় মনে হয়।
    লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে পড়ে।
    এ সকল বিষয় গুলোর জবাব দেয়া হয়েছে এখানে।
২.  আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের অর্থ ঃ
১.  আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ৭টি কাজ রয়েছে
    নিজের জীবনের সকল কিছু একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট্য করা, আনআম-১৬২, বাইয়েনা- ৫
    খালেসভাবে আল্লাহর দ্বীনের আনুগত্য করা, কুরআন-
    গোপনে ও প্রকাশ্যে সকল কাজে তাকে ভয় করা, কুরআন-
    উপায় উপাদানের তুলনায় আল্লাহর শক্তির উপরই ভরসা করা, কুরআন-
    আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য লোকের বিরাগ ভাজন হওয়া, কুরআন-
    বন্ধুত্ব, শত্র“তা, লেনদেন শুধু তার জন্য করা, হাদিস-
    নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী না চলা (চলার পথকে আল্লাহর নির্ধারিত সীমায় রাখা) কুরআন-
৩.  আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির উপায় ঃ
১.    সম্পর্ক স্থাপনের পন্থা বা ধরণ
২.    বৃদ্ধির উপায় ২টি
৩.    বাস্তব কর্মপন্থার ফলাফল

১.    সম্পর্ক স্থাপনের পন্থা বা ধরণ
    সর্বান্ত করণে একমাত্র আল্লাহকে নিজের ও সমগ্র জগতে ইলাহ বা মালিক হিসাবে মেনে নেয়া।
    উপাস্য ও শাসকরুপে স্বীকার করা।
    প্রভূত্বের গুণাবলী ও ক্ষমতা একমাত্র তারই বলে স্বীকার করা।
    মন থেকে শিরক মুক্ত করা।
    আন্তরকে নির্মল ও পবিত্র করা।

২.    বৃদ্ধির উপায় ২টিঃ যথা-
    চিন্তা গবেষণা ঃ
- কুরআন, হাদিস, সাহিত্য বুঝে শুনে বার বার অধ্যয়নের মাধ্যমে সম্পর্কের ধরণ লাভ করা।
- সম্পর্কের অনুভূতি লাভ ও সার্বক্ষণিক স্বরণ।
    কুরআন-হাদিসের আলোকে যে সব বিষয়ে আল্লাহর সাথে আপনার যোগ-সম্পর্ক অনুভূত হবে ঃ
- আল্লাহ আমাদের মাবুদ, আমরা তার গুলাম।
- আমরা তার প্রতিনিধি।
- আল্লাহর সাথে আমরা ঈমান এনে চুক্তি সম্পাদন করেছি।
- আমাদেরকে তার নিকট জবাবদিহী করতে হবে।

    বাস্তব কর্মপন্থা ঃ
- নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করা।
- অনিচ্ছায় নহে বরং স্বতঃস্পূর্ত আগ্রহ ও উৎসাহের সাথে তার নির্দেশিত কাজ করা।
- পার্থিব স্বার্থ ব্যতিরেকে একমাত্র তার সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা।
- গোপনে প্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ ঘৃণা করা।

৩.    বাস্তব কর্মপন্থার ফলাফল
    সমস্ত কাজ তাকওয়ার পর্যায়ে উপনীত হবে।
    পরবর্তী কর্মপন্থা আপনাকে এহসানের পর্যায়ে উপনীত করবে।
    আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বিকাশ সাধনের উপকরণ।

৪.  আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বিকাশ সাধনের উপকরণ ঃ
১.    কর্মপন্থার ধরণ
২.    এই শক্তি অর্জন কিভাবে সম্ভব তার মাধ্যম
১.    কর্মপন্থার ধরণ
    এপথ সহজ নয়, দূর্গম লক্ষ্যস্থল।
    এই লক্ষ্যস্থলে পৌঁছার জন্য বিশেষ শক্তি সামর্থ প্রয়োজন।

২.    এই শক্তি অর্জন কিভাবে সম্ভব তার মাধ্যম
    সালাত-
    শুধু ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত নয়।
    সাধ্যানুযায়ী নফল ইবাদাতও করতে হবে।
    নফল ইবাদাত হবে গুপনে, নিষ্ঠার সাথে।
    প্রচার করলে অন্তরে অহমিকা আসে।
    আল্লাহর যিকির-
    জীবনের সকল ক্ষেত্রে তার যিকির।
    যিকিরের অর্থ বুঝা ও অনুধাবন করা।
    সুফীদের পন্থা নয়, রাসুলের সা.নীতি অনুস্বরণ করা।
    সাধ্যানুযায়ী দোয়া মুখস্থ ও পড়ার চেষ্টা করা।
    আল্লাহকে স্বরণের জন্য দোয়ার গুরুত্ব বেশী।
    সাওম-
    শুধু ফরজ নয়, নফল রোজা অত্যান্ত জরুরী।
    মাসে ৩টি রোজা রাখা সুন্নাত।
    সাওমের উদ্দেশ্য হবে তাকওয়া।
    আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়-
    ইহা ফরজ নয় সুন্নাত, তবে মর্যাদা ও গুরুত্ব বেশী।
    সম্পদের পরিমাণ নয়, নিয়ত ও ত্যাগ কুরবানী আল্লাহকে দেখানো।
    তাকওয়ার সাথে অর্থ ব্যয়, সাধারণ তাকওয়ার চেয়ে জরুরী।
    তাজকিয়ার জন্য অর্থ ব্যয় খোদার নির্দেশ।
    তপস্যা, মুরাকাবার প্রয়োজন নেই, ঘরে বসেই সম্ভব হবে এ পথেই।

৫. আল্লাহর সাথে সর্ম্পক যাচাই করার উপায় ঃ
১.    কাশফ, কারামত বা অলৌকিকত্বের দরকার নেই, নিজের অন্তরই যথেষ্ট
২.    তার জন্য যা বিশ্লেষণ করতে হবে
৩.    বড় কারামত
১.    কাশফ, কারামত বা অলৌকিকত্বের দরকার নেই, নিজের অন্তরই যথেষ্ট।
২.    তার জন্য যা বিশ্লেষণ করতে হবে
    নিজের জীবন ও কর্মের পর্যালোচনা করা।
    চিন্তা ও ভাবধারা সম্পর্কে পর্যালোচনা করা।
    নিজের হিসাব নিজে নেওয়া (নিজ স্বার্থে আঘাত লাগলে কেমন লাগে দেখা) কুরআন-
    প্রদত্ত ওয়াদার পর্যালোচনা করা, কুরআন-
    আল্লাহর আমানাতের আমানাতদারীতা সম্পর্কে পর্যালোচনা করা, কুরআন-
    সময়, শ্রম, যোগ্যতা-প্রতিভা ও ধন সম্পদ কতটুকু আল্লাহর পথে ব্যয় হয়েছে তার পর্যালোচনা।
    খোদাদ্রোহীদের তৎপরতায় কতটুকু আপনার মধ্যে যাতনা সৃষ্টি করে, কুরআন-
       
                                                                                                                    
৩.    বড় কারামত
    চরম জাহেলিয়াতের মধ্যে অবস্থান করে তাওহীদের নিগুড় তত্ত্ব অনুসন্ধান ও অনুধাবন-এটাই বড় কারামত।

৬.  আখেরাতকে অগ্রাধিকার দান ঃ
১.    গুরুত
২.    লক্ষ্য
৩.    জবাবদিহী
৪.    আখেরাতে মর্যাদা লাভের মাপকাঠি-পরীক্ষা
৫.    সার্বক্ষনিক অনুভূতি ও প্রচেষ্টা
১.    গুরুত
    পার্থিব সুবিধার চেয়ে আখেরাতকে অধিক গুরুত্ব দিবেন।
২.    লক্ষ্য
    আখেরাতের সাফল্যকে লক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করুন।
৩.    জবাবদিহী
    দুনিয়ার সাফল্য জিজ্ঞাসা না করে খেলাফত কতটুকু পালন হয়েছে তা জিজ্ঞাসা করা হবে।
৪.    আখেরাতে মর্যাদা লাভের মাপকাঠি-পরীক্ষা
    আমাদেরকে দুনিয়াতে পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
    দুনিয়ার সম্পদকে সদ্ব্যবহার করে স্থায়ী জান্নাতের বাসিন্দা হওয়ার পরীক্ষা দিতে হবে।
    দুনিয়ার শিক্ষা সভ্যতার উন্নতি লাভে কতখানী সাফল্য লাভ করেছি তার পরীক্ষা দিতে হবে না।
    পরীক্ষার মূল বিষয়-আল্লাহর আমানাতের ব্যাপারে খিলাফতের দায়িত্ব পালনে কতখানী যোগ্য হয়েছি।
    আমরা কি বান্দা হিসাবে তার মর্জি পূরণ করি, না অন্য কারো ইচ্ছা পূরণ করি? এটাই আমাদের পরীক্ষা।
    আসল কামিয়াবী হলো-দুনিয়াতে নিজেদেরকে আল্লাহর অনুগত বান্দা-তাবেদার সাব্যস্ত করা।
৫.    সার্বক্ষনিক অনুভূতি ও প্রচেষ্টা
    সর্বদা আখেরাত স্বরণ রাখার জন্য অনুভূতি সহকারে কঠোর পরিশ্রম ও যতœ করতে হবে।
    না হলে আখেরাতকে অস্বীকার না করেও কাফিরদের মত পার্থিব কাজে লিপ্ত হয়ে পড়বো।
    আখেরাতকে স্বীকার করা কঠিন কাজ নয়, কিন্তু গোটা চিন্তাধারা, নৈতিক চরিত্র ও সমগ্র জীবনের বুনিয়াদ হিসাবে গ্রহণ করে তদানুযায়ী কাজ করা কঠিন।

৬.    আখেরাতের চিন্তার লালন ঃ

১.    সার্বক্ষণিক অনুভূতির পন্থা ২টি। যথা
    চিন্তা ও আদর্শ মূলক ঃ
অর্থ বুঝে কুরআন অধ্যয়ন ঃ এতে পাওয়া যাবে
হাদিস অধ্যয়ন ও অনুধাবন ঃ এতে পাওয়া যাবে
আন্তরিকতার সাথে কবর জিয়ারত
    ঈমান এনেছি একথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে নিন্মোক্ত কাজগুলো করা।
#অর্থ বুঝে কুরআন অধ্যয়ন ঃ এতে পাওয়া যাবে
    প্রতি পৃষ্ঠায় আখেরাতের আলোচনা।
    আখেরাতের বিস্তারিত বিবরণ।
    স্থায়ী বাস ভুমির জন্য অস্থায়ী বাস ভুমিতে প্রস্তুতি গ্রহণ।
#হাদিস অধ্যয়ন ও অনুধাবন ঃ এতে পাওয়া যাবে
    কুরআনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা।
    রাসুলকে সা. জানার উপায়।
    রাসুল সা. ও সাহাবাদের ত্যাগের স্বরণ।
২.    আন্তরিকতার সাথে কবর জিয়ারত
    মৃত্যুকে স্বরণ করার জন্য।
    বাস্তব কর্মপন্থ ঃ
দুনিয়াতে সমস্যা
করনীয়
অভাব পূরণ করার পন্থা
অভাব পূরণের শত
# দুনিয়াতে সমস্যা
    একদিকে আখেরাতকে বিশ্বাস ও অপর দিকে দুনিয়াদারীর হাতছানী দিয়ে ডাক।
# করনীয়
    নফসের দূর্বলতা বশত কখনো দুনিয়া মূখী হয়ে গেলে স্বরণ আসার সাথে সাথে পথ পরিবর্তনের চেষ্টা করতে হবে।
    নিজের হিসাব নিকাশ করে দেখা দরকার-কি পরিমাণ আখেরাতের দিকে অগ্রসর হয়েছেন ।
    এতে বুঝতে পারবেন আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস কতখানি মজবুত আর কতখানী পূরণ করতে বাকী আছে।
# অভাব পূরণ করার পন্থা
    দুনিয়ার লোকদের সংশ্রব পরিত্যাগ করা।
    যারা আখেরাতকে প্রধান্য দেয় তাদের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা। 
# অভাব পূরণের শর্ত
    নিজের চেষ্টা ছাড়া গুণের হ্রাস-বৃদ্ধির কোন পন্থা আবিস্কৃত হয়নি।
    নিজের মধ্যে গুণ সৃষ্টির মূল উপাদান ও গুণ বিদ্যমান না থাকলে তাতেও হবে না।
৮.  অযথা অহমিকা বর্জন ঃ

১.    সতর্কতা
২.    অহমিকার ধরণ
৩.    অপপ্রচার
৪.    অপপ্রচারকারীদের স্বরূপ
৫.    কামালিয়াতের পার্থক্য
৬.    ৩ টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

     সতর্কতা
    ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক জীবনে যাতে সামান্য সংস্কারের জন্য অহমিকা দেখা না দেয়।
     অহমিকার ধরণ
    আমরা পূর্ণতা লাভ করেছি মনে করা।
     অপপ্রচার
    জামায়াত নিছক একটি রাজনৈতিক দল।
    আধ্যাতিœকতার নাম নিশানা নেই।
    পরিচালক বা দায়িত্বশীলগণ কোন পীরের মুরীদ নয়।
৪.  অপপ্রচারকারীদের স্বরূপ
    কুফুরীর আশ্রয়ে ইসলামের আংশিক খেদমত করে বিরাট কীর্তি মনে করা।
    দ্বীন বিজয়ী বা প্রতিষ্ঠা করার কোন পরিকল্পনা নেই।
    দ্বীন বিজয়ী করার বিজয়কে দুনিয়াবী বিজয় বলে ঘোষণা করেন।
৫.  কামালিয়াতের পার্থক্য
    ইসলামী আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে অবস্থানকারী লোকদের মান-পীরবাদের ট্রেনিং দাতাদের সমান নয় বরং অনেক বেশী।
৬.  তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
    কামালিয়াত একটি সীমাহীন ব্যাপার-কোন পর্যায়ে গিয়ে পূর্ণতা অনুভব হয়। উন্নতির চেষ্টা না থাকলে মান নীচের দিকে নেমে যাবে।
    ইসলামের সর্ব নিন্ম মান-
     অন্য মতবাদের আদর্শের তুলনায় অনেক শ্রেষ্ঠ।
     আন্বিয়া ও সাহাবাদের দেখলে ইসলামের মহানতœ বুঝতে পারবেন।
     মুমূর্ষ রোগী দেখে খুশী হলে চলবে না বরং বীর পাহলোওয়ানদের প্রতি লক্ষ্যকরবেন।
     দ্বীনের ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত উন্নতির দিকে খেয়াল করা,
     সম্পদের ব্যাপারে নীচের দিকে খেয়াল করা,
    আমাদের মান-প্রকৃত ইসলামের আলোকে দেখতে হবে। ত্র“টি বিচ্যুতি স্বীকার করে শুধু যেন বিনয়ী হবার জন্য নয়, বরং তা যেন আন্তরিক স্বীকৃতি হয়।

৯.  ট্রেনিং কেন্দ্র সমুহের উপকারিতা ঃ

১.    প্রধান উপকারীতা
২.    ট্রেনিং কোর্স সমুহ দুই ভাগে বিভক্ত
১.    প্রধান উপকারীতা
    আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহযোগিতা।
২.    ট্রেনিং কোর্স সমুহ দুই ভাগে বিভক্ত
    শিক্ষা মূলকঃ
    অল্প সময়ে মৌলিক জ্ঞান অর্জন।
    জীবন ব্যবস্থা, দাবী, পন্থা, আন্দোলনের কর্মসূচী বুঝতে পারা।
    জীবন ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় কোন ধরণের ব্যক্তিগত ও সামাজিক চরিত্র প্রয়োজন তা বুঝা।

    অনুশীলন মূলকঃ
    অল্প সময়ের জন্য হলেও ইসলামী রাষ্ট্রের নমুনার সাথে সংস্পর্শ।
    অন্যের কাছ থেকে গুণাবলী আহরণ।
    পারষ্পরিক সহযোগিতা।
    দুনিয়ার সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহর জন্য কর্ম তৎপরতার কেন্দ্রীভূত।
    নিয়মানুবর্তিতা, শৃংখলা, ভ্রাতৃত্ববোধ ইত্যাদি শিখবে।



১০.  নিজের ঘর সামলান ঃ
    সন্তান-সন্ততি ও পরিবার পরিজনদের সংশোধন সম্পর্কে কুরআনের নির্দেশ রয়েছে, ইয়া আইয়ু হাল্লাজিনা আমানু ক-আনফুসাকুম ওয়াহলি কুম নারা, সুরা তাহরিম- ৬।
    অনেকের পক্ষ থেকে অভিযোগ আসে-নিজেরা নিজের সন্তান-সন্ততির জন্য চেষ্টা কম করেন, এব্যাপারে কুরআনের নির্দেশ আছে, রাব্বানা হাব লানা মিন আজওয়াজিনা ওয়াজুর রিয়্যাতিনা কুররাতা আ’ইউনিয়াউ ওয়াজায়ালনা লিল মুত্তাকীনা ইমামা, ফুরকান-৭৪।
    বন্ধু বান্ধবদের সন্তানদের সংশোধনেরও চেষ্টা করতে হবে।

১১.  পারস্পরিক সংশোধন ও এর পন্থা
১.    গুরুত্ব
২.    পন্থা
১.    গুরুত্ব
    একই কলেমা বুলন্ধের সংগ্রাম,
    বন্ধন মজবুত না হলে সফল হবে না,
    পরষ্পরকে দোষ মুক্ত করা ঈমানী দায়িত্ব।
২.    পন্থা
    দোষ-ত্র“টি দেখলে তাড়াহুড়া না করে বিষয়টি সুষ্ঠভাবে বুঝতে চেষ্টা করা।
    মেজাজ বুঝে নির্জনে সাক্ষাত করে আলাপ করা।
    এতেও সংশোধন না হলে তার দায়িত্বশীলকে জানানো।
    আমীর বা দায়িত্বশীল প্রয়োজন মনে করলে বৈঠকে আনবেন।
    কিন্তু ব্যক্তির অবর্তমানে গীবত বা পরচর্চা করা যাবে না।

১২.  পারস্পরিক সমালোচনার সঠিক পন্থা ঃ
১.    সমালোচনা কেন
২.    ক্ষতির আশংকা
৩.    সমালোচনা নিয়ম
৪.    সমালোচনার গুরুত্ব
১.    সমালোচনা কেন
    পারষ্পরিক ত্র“টি দূর করার জন্য।
২.    ক্ষতির আশংকা
    সমালোচনার সীমা ও পদ্ধতির সতর্কতা অবলম্বন না করলে।
৩.    সমালোচনা নিয়ম
    সময়ঃ
     সর্বদা নয়, বৈঠকে দায়িত্বশীলের অনুমতিক্রমে।
    অনুভূতিঃ
     আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে সমালোচনা পেশ করবে, ব্যক্তি স্বার্থে নয়।
    ভংগী ও ভাষাঃ
     শুভাকাংখীর মত হবে।
    প্রমাণঃ
     বলার পূর্বে বাস্তব প্রমাণ উপস্থাপন।
    যার সমালোচনা হবে তার করণীয়ঃ
     ধর্য্য সহকারে শ্রবণ করা।
     সততার সাথে ভাবা।
     সত্য অকপটে স্বীকার করা।
     মিথ্যা যুক্তি দ্বারা খন্ডন না করা।
    সীমাঃ
     বক্তব্য সীমাহীন নয়, সুস্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত শেষ। পরে চিন্তা করা।
৪.    সমালোচনার গুরুত্ব
    সংগঠনের নিয়ম শৃংখলা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন।
    আমীর থেকে নেতা পর্যন্ত কেউ এই সমালোচনার উর্ধে থাকবে না।
    ইহা সংগঠনের অস্তিত্ব বজার রাখার জন্য অপরিহার্য কাজ।
    যে দিন সমালোচনার দ্বার রুদ্ধ হবে সে দিন থেকে আমাদের অধপতন শুরু হবে।
১৩.    আনুগত্য ও নিয়ম-শৃংখলা সংরক্ষণ ঃ
১.    আনুগত্য শৃংখলার বর্তমান মান
২.    আমাদের টার্গেট
৩.    আমাদের হাতিয়ার
৪.    আনুগত্যের শরয়ী হুকুম
১.    আনুগত্য শৃংখলার বর্তমান মান
    বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে সুসংবদ্ধ মনে হবে।
    আমাদের আদর্শ, দায়িত্ব, কর্তব্যের প্রতি লক্ষ্য করলে আনুগত্য শৃংখলা নিতান্ত নগন্য মনে হয়।
২.    আমাদের টার্গেট
    আমাদরে উপায় উপাদান নিতান্তই সামান্য, জাহেলিয়াতের উপায় উপাদান ১০০ গুণ বেশী মজবুত।
    শুধু বাহ্যিক পরিবর্তন নয়, জাহেলিয়াতের অন্তর্নিহীত ভাবধারায়ও আমুল পরিবর্তন করাই আমাদের চাই।
৩.    আমাদের হাতিয়ার
তখনই উদ্দেশ্য সফল হতে পারে-
    যখন আমাদের লড়ার শক্তি হবে নৈতিক শক্তি ও সাংগঠনিক শক্তি।
    যখন জামায়াত নেতৃবৃন্ধের ইশারায় প্রয়োজনীয় শক্তি সমাবেশ করতে সমাজের সাধারণ লোকেরা এগিয়ে আসবে।
৪.    আনুগত্যের শরয়ী হুকুম
    আমীরের আনুগত্য মূলতঃ আল্লাহ ও রাসুলের সা. আনুগত্য করা।
    আল্লাহ ও দ্বীনের সাথে সম্পর্ক যত ঘনিষ্ঠ হবে সে তত বেশী আনুগত্য পরায়ন হবে-ইহা মানদন্ড।
    নিজের রুচি, স্বার্থ, সবকিছুর বিরুদ্ধে নেতার আনুগত্যই বড় কুরবানী বিবেচিত।
    আনুগত্যে আন্তরিকতার অভাব, অস্বস্তি ও বিরক্তির প্রকাশ-ইসলামকে সঠিক অনুধাবনের অভাবের ফলশ্র“তি।

১৪.    জামায়াত নেতৃবৃন্ধের প্রতি উপদেশ ঃ

    অহেতুক কর্তাগিরী বা প্রভূত্বের স্বাদ গ্রহণ নয়, নম্র ও মধূর ব্যবহার দিতে হবে।
    ব্যবহারে ত্র“টি কর্মীর মনে বিদ্রোহের আগুন জন্ম দিতে পারে।
    একই ধারা নয়, বরং অবস্থা, সময় ও সুযোগ বুঝে কাজ দেয়া।
    সম্পর্কের মানঃ
     আদেশ অনুরোধ নির্দেশের কাজ করবে।
     হুকুম-বেতন ভুক্ত সিপাহী, অনুরোধ হুকুমে পরিণত হবে।
     স্বেচ্ছাসেবীদের সম্পর্ক তিক্ততার সমাপ্তী ঘটায়।
     হুকুম দেয়া সাংগঠনিক চেতনার অভাব প্রমাণ করে।

১৫.  বিরোধীতা ঃ
১.    বিরোধীতার ধরণ
২.    বিরোধীতার উদ্দেশ্য ২টি
৩.    কারা কি কারণে বিরোধীতার ঝড় তুলেছে
৪.    যারা বেশী ক্ষতি করছে
৫.    তাদের ব্যাপারে আমাদের ধারণা
৬.    বিরোধীতার প্রতিকারে আমাদের করণীয়
৭.    বিরোধীতাকারীদের শুকরিয়া আদায়
৮.    জামায়াতের আলেমদের প্রতি উপদেশ
১.    বিরোধীতার ধরণ
        অধিকাংশই মিথ্যা প্রচারণা-
    অপবাদ রটনার সাহায্যে আমাদের বিরোধীতা করছে।
২.    বিরোধীতার উদ্দেশ্য ২টি
    আমাদের বিরুদ্ধে জনগনকে উত্তেজিত করতে।
    ইসলামী বিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা বানচাল করতে।

৩.    কারা কি কারণে বিরোধীতার ঝড় তুলেছে
    ক্ষমতাশীন দল ও তাদের পত্রিকাগুলো, কারণ-তারা ইসলামী রাষ্ট্রকে বিপদ জনক মনে করে।
    পাশ্চাত্য ধর্ম বিরুধী সভ্যতা, কারণ-লাগামহীন স্বাধীনতায় ঈমান ও চরিত্র অসহ্য বিবেচিত হচ্ছে।
    বিভিন্ন গুমরাহী দল সমুহ, কারণ-দেশে ইসলামী সমাজ কায়েম হলে তাদের কারসাজি বন্ধ হবে।
    আর কম্যুনিষ্টরা, কারণ-তাদের প্রকৃত বিরোধী দল হলো জামায়াতে ইসলামী।
৪.    যারা বেশী ক্ষতি করছে
    তাদের মধ্যে এমন কিছু দলও রয়েছে-যারা আলেম।
    যারা কাদিয়ানী, ধর্ম বিরোধী ও খোদাদ্রোহীদের সাথে কাঁধ মিলিয়ে আঘাত হেনেছে।
৫.    তাদের ব্যাপারে আমাদের ধারণা
    যাদেরকে আমরা দ্বীনদার ও আল্লাহভীরু মনে করতাম।
    আমরা মনে করতাম তারা দ্বীন কায়েমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
    আমরা তাদের পদাংক অনুস্বরণ করবো।

৬.    বিরোধীতার প্রতিকারে আমাদের করণীয়
    উত্তেজিত না হওয়া, শয়তানের চক্রান্ত মনে করা।
    তাদের ব্যবহারে দুঃখ সীমাবদ্ধ রাখা, ঘৃনায় পরিণত না করা।
    বাইরের আক্রমণ রক্ষা করা নেতার হাতে, নিজ কর্তব্য সম্পাদন করুন।
    বিরোধীতার জবাব দিতে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লংগন না করা।
    বিরোধীতার কারণে আন্দোলনের অগ্রগতির সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
৭.    বিরোধীতাকারীদের শুকরিয়া আদায়
কারণ তারা দ্বীন প্রচার করছে-
    সরকারের কারণে কর্মচারীদের মধ্যে প্রচার।
    গুমরাহী দলগুলো তাদের মধ্যে।
    আলেমরা ধর্মীয় লোকদের মধ্যে।
৮.    জামায়াতের আলেমদের প্রতি উপদেশ
আলেমদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে তাদের বুঝাতে হবে-
    আপনারা কেন বিরোধীতা শুরু করছেন।
    সাধারণ লোকেরা ইসলাম কায়েমের জন্য আন্দোলনে আসছে।
    আপনাদের মধ্যে দ্বীন কায়েমের মত দল গঠন করা সম্ভব নয়।
    আপনারা ফাসেক লোকদের নেতৃত্ব মেনে নিচ্ছেন কেন।
    জামায়াতের সাথে মত বিরোধ আলোচনা করে শেষ করা যায় না।
    কুরআন হাদিসের শিক্ষা অর্জন করে কিভাবে ঈমান বিক্রি করবেন।
    আপনারা কি পীর, উস্তাদদের শিখলে আবদ্ধ থাকবেন।

১৬.  দাওয়াতের সংক্ষিপ্ত কোর্স ঃ

    সাতটি বই পড়া দরকার-
     বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামী।
     জামায়াতে ইসলামীর বৈশিষ্ট্য।
     ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি।
     মুসলমানদের অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত কর্মসূচী।
     জামায়াতে ইসলামীর কার্যবিবরনী।
     জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস।
     ইসলামী বিপ্লবের ৭দফা কর্মসূচী।
১৭.  মহিলা কর্মীদের প্রতি উপদেশ ঃ

    মহিলাদের প্রতি মাওলানা মওদুদীর ৪টি উপদেশ-
     জীবন গড়ার জন্য দ্বীনের যথাযথ জ্ঞান লাভ করা দরকার। কুরআন, হাদিস ও ফিকাহসহ পড়া।
     জ্ঞান অনুযায়ী বাস্তব জীবন পরিচালনা করার চেষ্টা করা। সংসারসহ সকল ক্ষেত্রে।
     সংশোধন মূলক কাজে নিজের সংসারের লোকদের ও আতœীয়দের প্রতি গুরুত্ব দেয়া।
     সাংসারিক কাজ সেরে সময় বাচিয়ে অন্য মহিলাদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌছানো।
ক্স    বাস্তব কর্মপন্থাঃ
১.    সঠিক পথে চলার তীব্র আকাংখা।
২.    নিজের আকর্ষণের মান পর্যালোচনা ও অভাব দেখা মাত্র পুরণ করার চেষ্টা করা।
৩.    অসৎ সংগ ত্যাগ করে সৎ সংগ লাভ করা।
৪.    নিজের চেষ্টা ব্যতীত গুণের হ্রাস বৃদ্ধি সম্ভব নয়।

Saturday, November 23, 2013

দারসুল কোরআন-৪


দারসুল কোরআন-৪

     সুরা লোকমান ১৩-১৯ আয়াত

* তেলাওয়াত ঃ-


* وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ ﴿١٣﴾ وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَىٰ وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ ﴿١٤﴾ وَإِن جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ﴿١٥﴾ يَا بُنَيَّ إِنَّهَا إِن تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُن فِي صَخْرَةٍ أَوْ فِي السَّمَاوَاتِ أَوْ فِي الْأَرْضِ يَأْتِ بِهَا اللَّهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَطِيفٌ خَبِيرٌ ﴿١٦﴾ يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنكَرِ وَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا أَصَابَكَ ۖ إِنَّ ذَ‌ٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ ﴿١٧﴾ وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ ﴿١٨﴾ وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِن صَوْتِكَ ۚ إِنَّ أَنكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ ﴿١٩﴾

অনুবাদ ঃ

১৩. (হে নবী, স্মরণ করো) যখন লোকমান তার ছেলেকে নসীহত করতে গিয়ে বললো, হে বৎস আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরক করোনা (কেননা) শিরক হচ্ছে সবচাইতে বড়ো যুলুম।
১৪.  আমি মানুষকে (তাদের) পিতামাতার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছি, (যেন তারা তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করে) কেননা তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দুই বছর পর সে বুকের দুধ খাওয়া ছেড়েছে, তুমি (সৃষ্টির জন্য) আমার শোকর আদায় করো এবং তোমার (লালন পালনের জন্য) পিতা মাতার ও কৃতজ্ঞতা আদায় করো, (অবশ্য তোমাদের সবাই) আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে।
১৫.  যদি তাঁরা উভয়ে তোমাকে এই বিষয়ের উপর পীড়াপিড়ি করে যে তুমি আমার সাথে শিরক করবে, যে ব্যাপারে তোমার কোন জ্ঞানই নেই, তাহলে তুমি তাদের দু’জনের (কারোরই) কথা মানবে না, তবে দুনিয়ার জীবনে তুমি অবশ্যই তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে, তুমি শুধু তার কথাই শুনবে, যে আমার অভিমুখী হয়ে আছে, অতঃপর তোমাদের আমার দিকেই ফিরে আসতে হবে, তখন আমি তোমাদের বলে দেবো তোমরা দুনিয়ার জীবনে কি কি কাজ করতে।
১৬. লোকমান আরো বললো হে বৎস, যদি (তোমার) কোনো আমল সরিষার দানা পরিমাণ (ছোট ও) হয় এবং তা যদি কোনো শিলাখন্ডের ভেতর কিংবা আসমান সমূহেও (লুকিয়ে) থাকে, অথবা (যদি তা থাকে) যমীনের) ভেতরে তাকাও আল্লাহ তায়ালা সামনে এনে হাযির করবেন, আল্লাহ তায়ালা সূক্ষ্মস্পর্শী এবং সকল বিষয়ে সম্যক অবগত।
১৭.  (লোকমান আরো বললো,) হে বৎস, তুমি নামায প্রতিষ্ঠা করো, মানুষদের ভালো কাজের আদেশ দাও, মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখো, তোমার উপর কোন বিপদ মুসিবত এসে পড়লে তার উপর ধৈর্য্যধারণ কর, এই কাজটি নিঃসন্দেহে একটি বড়ো সাহসিকতাপূর্ণ কাজ।
১৮. (হে বৎস) কখনো অহংকার বশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং (আল্লাহর) যমীনে কখনো ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে বিচরণ করোনা, কেননা আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক উদ্ধৃত অহংকারীকে অপছন্দ করেন।
১৯. (হে বৎস, যমীনে চলার সময়) তুমি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো, তোমার কণ্ঠস্বরকে নিচু রাখো, কেননা সব আওয়াজের মধ্যে সবচাইতে অপ্রীতিকর আওয়াজ হচ্ছে গাধার আওয়াজ।

*নামকরণ ঃ
সুরার দ্বিতীয় রুকুতে অর্থাৎ আলোচ্য রুকুতে লুকমান হাকীমের উপদেশাবলী উদ্ধৃত করা হয়েছে। এ থেকেই সূরার লুকমান নামকরণ করা হয়েছে।

*শানে নুযুল ঃ

সুরাটি মাক্কী

সূরার আলোচনা ও বিষয়াদি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে মনে হয়, যখন ইসলামী দাওয়াতকে দমন ও প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে বিরোধীদের তরফ হইতে অত্যাচার ও নিপীড়ন শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু বিরুদ্ধতার তুফান তখনো পূর্ণমাত্রায় তীব্র ও কঠিন হয়ে উঠেনি। তখনই এ সূরাটি নাযিল হয়। ১৪-১৫ আয়াতে বিষয়টির আভাস পাওয়া যায়। সেখানে ইসলামে নবদীক্ষিত যুবকদেরকে বলা হয়েছে, আল্লাহর পরে পিতামাতার অধিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তারা যদি ইসলামে দীক্ষিত হতে বাধা দেয় এবং শিরক করতে বলে তাহলে তাদের কথা কখনোই মেনে নেবে না। সূরা আনকাবুতেও একই কথা বলা হয়েছে এ থেকে জানা যায়, সূরা দুটি একই সময়ে নাযিল হয়েছে।

*উভয় সুরার বর্ণনা রীতি ও বিষয়বস্তুর কথা চিন্তা করলে অনুমান করা যায়, সুরা লোকমান প্রথমে নাযিল হয়। কারণ এতে তীব্র আকারের বিরোধীতার চি‎হ্ন পাওয়া যায় না। বিপরীত পক্ষে সূরা আনকাবুত পড়লে মনে হবে তার নাযিলের সময় মুসলমানদের ওপর কঠোর জুলুম নিপীড়ন চলছিল।
সুতরাং বলা যায়, সূরা লোকমান রাসূল (সঃ) এর মাক্কী জীবনের দ্বিতীয় স্তরে নাযিল হয়।

**আলোচ্য বিষয় ঃ

১.    শিরক অর্থহীন, অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন ব্যাপার। তাওহীদ একমাত্র সত্য ও যুক্তিসম্মত আদর্শ।
২.    বাপ-দাদার অন্ধ অনুকরণ ও অনুসরণ পরিত্যাগ করে মুহাম্মদ (সঃ) এর আদর্শকে উন্মুক্ত মনে চিন্তা বিবেচনা করে তা গ্রহণের দাওয়াত দেয়া হয়েছে।
৩.   হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর দাওয়াত কোন নতুন আওয়াজ নয়, পূর্বের জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন লোকেরাও এ কথাই বলত-যেমন হযরত লোকমান।
৪.    আল্লাহ সর্বদ্রষ্টা, সূক্ষ্মদর্শী ও সকল বিষয়ে সম্যক অবগত।
৫.    নামায কায়েম, ইসলামী আন্দোলন মুমিনের বৈশিষ্ট্য বিপদে মুসিবতে ধৈর্য্যধারণ করা বড়ো সাহসিকতাপূর্ণ কাজ।
৬.    অহংকার।
৭.    মধ্যপন্থা অবলম্বন।

হযরত লোকমান এর পরিচয় :-

**লোকমান হাকীম আরব সমাজে একজন বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী হিসেবে বহুল পরিচিত ব্যক্তি। ইমরাউল কায়েস, লবীদ আশা, তারাফাহ প্রমুখ জাহেলী যুগের কবিগণ তাদের কাব্যে লুকমানের নাম উল্লেখ করেছেন। আরবের কোন কোন লোকের কাছে “সহীফা লুকমান” নামক তাঁর জ্ঞানগর্ভ উক্তির একটি সংকলন পাওয়া যেত।
**ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে লুকমানের ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে অনেক মতভেদ রয়েছে। জাহেলী যুগে কোন লিখিত ইতিহাসের অস্তিত্ব ছিলনা। মুখে মুখে চলে আসা তথ্যই ছিল ইতিহাস।
**ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বেহের বর্ণনানুযায়ী লোকমান হযরত আইয়্যুব (আঃ) এর ভাগ্নে ছিলেন।

**তাফসীর দুররে মনসুরে হযরত ইবনে আব্বাসের (রাঃ) বর্ণনানুযায়ী লোকমান একজন আবিসিনীয় হাবশী গোলাম। হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) ইকরিমাহ ও খালেদুর রাবে-ঈ ও একই কথা বলেন। হযরত যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী (রাঃ) বলেন- তিনি ছিলেন নুবার অধিবাসী। সাঈদ ইবনে মুসাইয়েব বলেনÑ তিনি মিসরের কালো লোকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনটি বক্তব্য প্রায় কাছাকাছি। আরবের লোকেরা সেকালে কালো লোকদেরকে প্রায়ই হাবশী বলত। আর নুবা হচ্ছে মিসরের দক্ষিণে ও সুদানের উত্তরে অবস্থিত এলাকা। লুকমান হাকীম ও লুকমান ইবনে আদ দু’জন আলাদা ব্যক্তি।

**হযরত যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেনÑ লুকমান চ্যাপটা নাকবিশিষ্ট, বেঁটে আকারের আবিসিনীয় ক্রীত দাস ছিলেন। মুজাহিদ (রঃ) বলেন “তিনি ফাটা পা ও পুরো ঠোঁটবিশিষ্ট আবিসিনীয় ক্রীতদাস ছিলেন। - ইবনে কাসীর।
হযরত লোকমান কোন নবী ছিলেন না, ওলী প্রজ্ঞাবান ও বিশিষ্ট মনীষি ছিলেন। - ইবনে কাসীর, ইমাম রাগবী।

কেবল ইকরিমা (রাঃ) মণিষী থেকে বর্ণিত যে তিনি নবী ছিলেন। কিন্তু এটি সনদের দিক থেকে দুর্বল।
ইবনে কাসীর (রঃ) বলেনÑ হযরত কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত- আল্লাহ পাক হযরত লুকমানকে নবুওত ও হেকমত (প্রজ্ঞা) দু’য়ের মধ্যে যে কোন একটি গ্রহনের সুযোগ দেন। তিনি হিকমত গ্রহণ করেন।
কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে- “যদি আমার প্রতি এটা (নবুয়ত) গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়ে থাক, তবে তা শিরোধার্য, অন্যথায় আমাকে ক্ষমা কর।
কুরতুবীতে আছে, ‘মহাত্মা লোকমান হযরত দাউদ (আঃ) এর আবির্ভাবের পূর্বে মাসআলাসমূহ সম্পর্কে ফতোয়া দিতেন।

এক প্রশ্নোত্তরে তিনি মর্যাদা লাভের কারণ বলেনÑ ১. সর্বদা সত্য বলা  ২. অপ্রয়োজনীয় কথা পরিহার করা।

হযরত লোকমানের উপদেশসমূহ

১.আল্লাহর সাথে শরীক না করা ।
   ২. পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যবহার ।
   ৩. নামাজ কায়েম করা।                               
   ৪. সৎ কাজের আদেশ-অসৎ কাজের নিষেধ।
   ৫. ধৈর্য্য ধারণ (সবর)।
   ৬. সামাজিক শিষ্টাচার ঃ (অহংকার না করা)।
   ৭. মধ্য পন্থা অবলম্বন।
   ৮. কণ্ঠস্বর নিচু করা।
ক.আল্লাহর সাথে শরীক না করা ঃ
শিরক শব্দের অর্থ অংশীদার। মানুষ পৃথিবীতে কোন কাজে তিন কারণে অংশীদারীত্ব করে।
ক. পুঁজির অভাব খ. আংশিক পুঁজির অভাব, গ. সংশ্লিষ্ট কাজে জ্ঞানের অভাব।
যেহেতু আল্লাহ উপরোক্ত দুর্বলতামুক্ত; তাই আল্লাহর সাথে শরীক করা চরম দৃষ্টতার শায়িল এবং চরম বোকামী কেননা যে শিরক করে, পক্ষান্তরে সে প্রমাণ করতে চায়, অখখঅঐ (ঝড) স্বয়ং সম্পূর্ণ নন (নাউজুবিল্লাহ) এবং তাঁর মধ্যে পরমুখাপেক্ষীতা রয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ)
শিরক মহাযুলুম। কারণ এর দ্বারা কোন ব্যক্তি এমন এক জিনিসকে/ বস্তুকে সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা ও নেয়ামতদাতা মহান আল্লাহর সামনে দাঁড় করায়, যার এসব ব্যাপারে একবিন্দু ক্ষমতা নেই, আল্লাহর হক হল- মানুষ শুধু তাঁরই ইবাদত করবে।
অর্থ ঃ আমি জ্বিন ও মানব জাতিকে আমার ইবাদত ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি।-    আয যারিয়াহ ৫৬
** শিরক দুই প্রকার ঃ
০১. আকীদাগত শিরক
০২. লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সৎ কাজ করা।
০১. আকীদাগত শিরক ঃ
কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা এবং তার ইবাদত করা। গাছ, পাথর, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, ফিরিশতা, নবী, ওলী ইত্যাদি যাই হোক না কেন, তাকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা ও তার ইবাদত করা শিরক।
০২. লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সৎ কাজ করা।
রাসূল (সঃ) বলেছেন ঃ তোমরা ছোট শিরক থেকে দূরে থাক। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন ছোট শিরক কি? তিনি বললেন ঃ রিয়া অর্থাৎ লোক দেখিয়ে সৎকাজ করা। যেদিন আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে কর্মফল দেবেন তাদেরকে বলবেন, যাদেরকে দেখিয়ে দেখিয়ে তোমরা নেক আমল করতে, তাদের কাছে চলে যাও। দেখ, তারা তোমাদেরকে কোন প্রতিদান দেয় কিনা।” (আহমাদ, বায়হাকী, তাবরানী)
হযরত ফযীল বিন ইযায বলেনÑ লোকের ভয়ে খারাপ কাজ ত্যাগ করা রিয়া, আর মানুষকে খুশী করার জন্য ভালো কাজ করা শিরক, ইখলাস হচ্ছে এ উভয় রোগ থেকে মুক্ত থাকার নাম।
**  শিরকের গুনাহ ক্ষমার অযোগ্য ঃ

সূরা আন-নিসা ঃ ১১৬                                                                   
অর্থ ঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়।                                                                                                                                                   
সূরা রাদ ১৪ আয়াত ঃ  
অর্থ ঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়।                                                                                                                                                   
সূরা রাদ ১৪ আয়াত ঃ  
“সত্যের আহবান একমাত্র তাঁরই এবং তাঁকে ছাড়া যাদেরকে ডাকে তারা তাদের কোন কাজে আসে না ওদের দৃষ্টান্ত সেরূপ, যেমন কেউ পানির দিকে দু’হাত প্রসারিত করে যাতে পানি তার মুখে পৌঁছে যায়, অথচ পানি কোন সময় পৌঁছবেনা। কাফেরদের যত আহবান সবই পথভ্রষ্টতা।
অর্থাৎ, আল্লাহর সাথে যাদের শরীক করা হয় তাদের কোন ক্ষমতা নেই, কাজে অসার। এটা পথভ্র “সত্যের আহবান একমাত্র তাঁরই এবং তাঁকে ছাড়া যাদেরকে ডাকে তারা তাদের কোন কাজে আসে না ওদের দৃষ্টান্ত সেরূপ, যেমন কেউ পানির দিকে দু’হাত প্রসারিত করে যাতে পানি তার মুখে পৌঁছে যায়, অথচ পানি কোন সময় পৌঁছবেনা। কাফেরদের যত আহবান সবই পথভ্রষ্টতা।
অর্থাৎ, আল্লাহর সাথে যাদের শরীক করা হয় তাদের কোন ক্ষমতা নেই, কাজে অসার। এটা পথভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সূরা রাদের ১৬ নং আয়াত ঃ
“জিজ্ঞেস করুন, নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের পালনকর্তা কে? বলে দিন ঃ আল্লাহ, তবে কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত এমন অভিভাবক স্থির করেছ, যারা নিজেদের ভাল মন্দেরও মালিক নয়। বলুন ঃ অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হয়? অথবা কোথাও কি আঁধার ও আলো সমান হয়? তবে কি তারা আল্লাহর জন্য এমন অংশীদার স্থির করেছে যে, তারা কিছু সৃষ্টি করেছে যেমন সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ? অতঃপর তাদের সৃষ্টি এরূপ বিভ্রান্তি ঘটিয়েছে? বলুন, আল্লাহই প্রত্যেক বস্তুর স্রষ্টা এবং তিনি একক, পরাক্রমশালী”।

সূরা আন কাবুতের ৪১ নং আয়াত ঃ 
 যেসব লোকেরা আল্লাহ তায়ালার বদলে অন্যকে (নিজেদের) অভিভাবক/সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহণ করে, তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে একটি মাকড়সার মতো তারা ঘর বানায় আর সব ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো অধিক দুর্বল কতো ভালো হতো তারা যদি এ সত্যটুকু বুঝতে পারতো।

সুরা যুখরুখ- ১৫ নং আয়াত ঃ
 তারা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে থেকে আল্লাহর অংশ স্থির করেছে। বাস্তবিক মানুষ স্পষ্ট অকৃতজ্ঞ।
সূরা ঝুমার-৬৫ঃ
যদি তুমি আল্লাহ তায়ালার সাথে (অন্যদের) শরীক কর তাহলে অবশ্যই (সব) আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থদের দলে শামিল হয়ে যাবে।
খ. পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যবহার ঃ
পিতা মাতার সাথে আচার আচরণ, ব্যবহার ও আনুগত্যের দুটি অবস্থা-
 * স্বাভাবিক অবস্থা ।  
* অনৈসলামিক ক্ষেত্রে।
 * স্বাভাবিক অবস্থা ঃ
এ অবস্থায় মাতাপিতার কৃতজ্ঞতা স্বীকার ও তাদেরকে মান্য করা ফরয।
এখানে মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য পালন এবং তাঁদের কৃতজ্ঞতা স্বীকারের নির্দেশ প্রমাণ করা হয়েছে, তখন এর হেকমত ও অন্তনির্হিত রহস্য বর্ণনা করেছেন যে, তার মা তার ধরাধামে তার আবির্ভাব ও অস্তিত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে অসাধারণ ত্যাগ স্বীকার ও অবর্ননীয় দুঃখ কষ্ট বরদাশত করেছেন। নয় মাসকাল উদরে ধারণ করে তার রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন এবং এ কারণে ক্রমবর্ধমান দুঃখ কষ্ট সহ্য করেছেন। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরও ২ বছর পর্যন্ত স্তন্য দানের কঠিন ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। দিনে রাতে মাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। আর সন্তান লালন-পালনে মাকেই যেহেতু অধিক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়, সেজন্য শরীয়তে মায়ের স্থান ও মর্যাদা অধিকার বেশী রাখা হয়েছে
 সূরা আনআম- ১৫১
(হে মুহাম্মদ) তুমি বলো, এসো আমিই (বরং) তোমাদের বলে দেই তোমাদের মালিক কোন্ কোন্ জিনিস তোমাদের জন্য হারাম করেছেন, তোমরা তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করবেনা, পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করবে------।
সূরা বনি ইসরাঈল ২৩,-২৪
                                                                                                                          
““তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন, তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কারো ইবাদত করো না এবং (তোমাদের) পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। তাদের একজন কিংবা উভয়ই যদি (তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাহলে তাদের সাথে বিরক্তিসূচক কোন কিছু বলো না এবং কখনো তাদের গালিগালাজ করো না। তাদের সাথে সম্মানজনক, ভদ্রজনোচিত কথা বলবে।
অনুকম্পায় ওদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো এবং বল, হে (আমার) মালিক, ওদের প্রতি (ঠিক সেভাবেই) তুমি দয়া কর যেমনি করে শৈশবে ওরা আমাকে লালন করেছিল।
সূরা আল আহকাফ- ১৫
“আমি মানুষকে আদেশ দিয়েছি, সে যেন নিজের পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করে, (কেননা) তার মা তাকে অত্যন্ত কষ্ট করে পেটে ধারণ করেছে, অতি কষ্টের সাথে তাকে জন্ম দিয়েছে (এবং) এইভাবে তার গর্ভধারণকালীন সময় ও (জন্মের পর) তাকে দুধ পান করানোর (দীর্ঘ) তিরিশটি মাস সময় অতপর সে (যৌবনের) পরিণত বয়সের দ্বারে এসে হাজির হয় এবং (একদিন) সে চল্লিশ বছরে এসে উপনীত হয়, তখন সে বলে, হে আমার মালিক, এবার তুমি আমাকে সামর্থ দাওÑ তুমি আমার ওপর (শুরু থেকে) যে সব অনুগ্রহ করে এসেছো এবং আমার পিতামাতার উপর যে অনুগ্রহ তুমি করেছ, আমি যেন এর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারি----।
* শিশুকে ২১/২ বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো যেতে পারে।
* গর্ভধারণের সময়কাল- সর্বনিম্নÑ ছয় (৬) মাস।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন ঃ তিনটি আয়াত তিনটি জিনিসের সাথে যুক্ত হয়ে নাযিল হয়েছে। এর একটি ব্যতীত অন্যটি কবুল হয়না।
১.    প্রথমটিতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ঃ “আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর। যে ব্যক্তি আল্লাহকে মানবে ও রাসূলকে মানবেনা, তার আল্লাহকে মানা কবুল হবে না।
২.    দ্বিতীয়টিতে আল্লাহ বলেন ঃ
“তোমার নামায কায়েম কর ও যাকাত দাও।” যে ব্যক্তি নামায পড়বে ও যাকাত দেবে না তার নামায কবুল হবে না।
৩.   তৃতীয়টিতে আল্লাহ বলেন ঃ “তুমি আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।” যে ব্যক্তি পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হবে না, তার আল্লাহ্র কৃতজ্ঞতা অর্থহীন ও অগ্রহণযোগ্য।
এজন্যই রাসূল (সাঃ) বলেছেন ঃ ‘পিতা মাতার সন্তোষে আল্লাহর সন্তোষ নিহিত এবং পিতামাতার অসন্তোষে আল্লাহ্র অসন্তোষ নিহিত।” তিরমিযী.
পিতা জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা-তিরমিযী
রাসূল (সাঃ) বলেন ঃ সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ কী, তা কি আমি তোমাদেরকে জানাবো? তা হচ্ছে আল্লাহর সাথে শিরক করা ও পিতামাতার সাথে অসদাচারণ।”
 * অনৈসলামিক ক্ষেত্রে আনুগত্য না করা ঃ
অবৈধ ও গোনাহের কাজে পিতামাতার আনুগত্য জায়েয নয়।
সৃষ্টিকর্তার নাফরমানীর কাজে কোন সৃষ্ট জীবের আনুগত্য জায়েয নয়। (আল হাদীস)
সুরা আন কাবুত- ৮ নং আয়াত
“হে ঈমানদারগণ! তোমার স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না। যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরকে ভালবাসে। আর তোমাদের যারা তাদেরকে অভিভাবকরূপ গ্রহণ করে তারা সীমালংঘনকারী।”
এ দুটি আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, পিতা মাতার আনুগত্য অপরিহার্য, তবে আল্লাহ রাসূলের (সাঃ) উপরে নয়। যখন এ দু’য়ের দ্বন্ধ দেখা দিবে তখন পরেরটিই অগ্রগণ্য হবে।

** ইসলামের অনন্য নীতি ঃ
শুধুমাত্র ইসলাম বিরোধী বক্তব্যের ক্ষেত্রে মাতাপিতার আনুগত্য করা যাবে না। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের অন্য সকল আচরণে তাদের মনোকষ্ট দেয়া যাবে না। সুন্দর ব্যবহার দ্বারা তাদেরকে জয় করতে হবে।
* পিতা মাতার সেবা যতœ ও সদ্ব্যবহারের জন্য তাঁদের মুসলমান হওয়া জরুরী নয়। হযরত আম্মার (রাঃ) এর মা মুশরিকা ছিলেন। তিনি নবীকে (সঃ) এর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে রসূল (সঃ) বললেনÑ “তোমার জননীকে আদর আপ্যায়ন কর।”
* কোন কাজ ফরজে কেফায়ার স্তরে থাকলে সন্তানের জন্য পিতামাতার অনুমতি ব্যতিরেকে তা করা জায়েজ নয়।
হযরত ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি এসে রাসূল (সাঃ) এর সাথে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইল। রাসূল (সাঃ) তাকে বললেন ঃ তোমার পিতামাতা কি বেঁচে আছেন? সে বললো ঃ জ্বি। রাসূল (সাঃ) বললেন “তাহলে তাদেরকে নিয়েই তুমি জিহাদ কর।” অর্থাৎ তাদের সেবাই তোমার জন্য জিহাদ।- বুখারী, মুসলিম
 পিতা-মাতার মৃত্যুর পর ঃ

পিতার সাথে সদ্ব্যবহার এই যে তার মৃত্যুর পর তার বন্ধুদের সাথেও সদ্ব্যবহার করতে হবে।   -বুখারী, (আবদুল্লাহ ইবনে উমার)
এক আনসারের প্রশ্নোত্তরে রসূল (সঃ) বলেন
“হ্যাঁ তাদের জন্য দোয়া, ই্স্তিগফার করা, তাঁরা কারো সাথে কোন অঙ্গীকার করে থাকলে তা পূরণ করা তাদের এমন আত্মীয়তা বজায় রাখা যাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক তাদেরই মাধ্যম।”
রসূল (সঃ) বিবি খাদীজার ওফাতের পর তাঁর বান্ধবীদেরকে উপঢৌকন দিতেন।
গ. নামাজ কায়েম করা ঃ
ঈমানের পর ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ সালাত। সালাত     এর আভিধানিক অর্থ কারো দিকে মুখ করা, অগ্রসর হওয়া মোতাওজ্জা হওয়া, দোয়া করা এবং নিকটবর্তী হওয়া। কুরআনের পরিভাষায় সালাতের অর্থ হলো আল্লাহর দিকে মনোযোগ দেয়া তাঁর দিকে অগ্রসর হওয়া, তার কাছেই চাওয়া এবং তাঁর একেবারে নিকটবর্তী হওয়া।

(১) সালাতের নির্দেশ ঃ
বাক্বারা-১৫৩
“হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন।”
বাকারা -৪৩
“আর সালাত কায়েম কর, যাকাত দান কর/ আদায় কর যারা আমার সামনে অবনত তাদের সাথে মিলে তোমরাও আমার আনুগত্য স্বীকার কর”।
বাক্বারা- ৪৫
“তোমরা সবর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাও। (যাবতীয় হক আদায় করে) সালাত প্রতিষ্ঠা করা (অবশ্যই একটা) কঠিন কাজ, কিন্তু যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের কথা আলাদা”।
ইবরাহীম- ৩১
“(হে নবী) আমার যেসব বান্দাহ ঈমান এনেছে তুমি তাদের বলো, তারা যেন নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি এ থেকে যেন (আমারই পথে) ব্যয় করে গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে, সে দিনটি আসার আগে, যেদিন (মুক্তির জন্য) কোনো রকম বেচাকেনা চলবে নাÑ না (তজ্জন্য কারো) কোনো প্রকার (বন্ধুত্ব) কাজে লাগবে”।
সূরা হিজর- ৯৮-৯৯

তুমি তোমার মালিকের প্রশংসা দ্বারা তার পবিত্রতা ঘোষণা করো এবং তুমিও সেজদাকারীদের দলে শামিল হয়ে যাও।
তোমার (নিশ্চিত) মৃত্য আসা পর্যন্ত তুমি তোমার মালিকের ইবাদত করতে থাকো।
সূরা ত্বোয়াহা- ১৪
“আমিই হচ্ছি আল্লাহ, আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোন মাবুদ নেই, অতএব তুমি শুধু আমারই এবাদত করো এবং আমার স্মরণের জন্য সালাত প্রতিষ্ঠা কর”।
(২) সালাতের আহবান ঃ
ত্বাহা- ১৩২
(হে নবী,) তোমার পরিবার পরিজনকে সালাতের আদেশ দাও এবং নিজেও তার উপর অবিচল থেকো, আমি তো তোমার কাছে কোনোরকম জীবনোপকরণ চাইনা আমিই তো তোমাকে রিযিক দান করেছি, আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করার জন্যই রয়েছে উত্তম পরিণাম।

এ আয়াত থেকে নিজে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে, পরিবারের লোকদেরও আমল করাতে হবে এবং আন্দোলনের গুরুত্ব বুঝাতে হবে এবং আদেশ করতে হবে। অনেকটা নিজের ঘর সামলানোর মত। তা না হলে নিজেই এক সময় অলসতার শিকার হতে হবে।
(৩) সালাতের সময় ঃ
ত্বোয়াহা- ১৩০
“অতএব (হে নবী) এরা যা কিছুই বলে তুমি তার উপর ধৈর্য্যধারণ কর, তুমি বরং তোমার মালিকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর সূর্যোদয়ের আগে এবং তা অস্ত যাওয়ার আগে। রাতের বেলায় ও দিনের দু’প্রান্তেও তুমি আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর, তাহলে (কেয়ামতের দিন) তুমি সন্তুষ্ট হতে পারবে”।
(৪) সালাতের আদায় পদ্ধতি ঃ
বাক্বারা- ২৩৮
“তোমরা সালাত সমূহের উপর (গভীরভাবে) যতœবান হও, মধ্যবর্তী সালাতসহ (সব কয়টি সালাতেরই হেফাযত করো)। আর আল্লাহর সামনে একান্ত অবনত মনে আদবের সাথে দাঁড়াও”।
মধ্যবর্তী সালাত বলতে সালাতুল আসবুরকে বুঝানো হয়েছে। কারণ অনেক লোকেরই এ সময় ব্যস্ততা থাকে।
আরাফ- ২৯
“আপনি বলে দিন ঃ আমার প্রতিপালক সুবিচারের ন্যয় ইসলামের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তোমরা প্রত্যেক সিজদার সময়/ ইবাদতের সময় স্বীয় মুখমন্ডল সোজা রাখ এবং তাঁকে আনুগত্যশীল হয়ে ডাক। তোমাদেরকে প্রথমে যেমন সৃষ্টি করেছেন। পুনর্বারও সৃজিত হবে”।
অর্থাৎ সালাতের সময় মুখন্ডল সোজা কিবলার দিকে রাখতে যতœবান হও। ব্যাপকভাবে প্রত্যেক কথায় কাজে স্বীয় আমলকে প্রতিপালকের নির্দেশের অনুসারী রাখ এবং সতর্ক থাক যেন এদিক ওদিক না হয়।

মো’মেনুন- ১-২
“যারা নিজেদের সালাত সমূহের ব্যাপারে (সমধিক) যতœবান হয়/ সালাতসমূহের হিফাজত করে”।
 (৫) সালাতের উপকারিতা ঃ
সালাতের উপকারিতা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গায়ই বিদ্যমান
সূরা আন-কাবুত- ৪৫
(হে নবী, যে) কিতাব তোমার উপর নাযিল করা হয়েছে তা তুমি তেলাওয়াত করতে থাক। তুমি সালাত প্রতিষ্ঠা কর, নিঃসন্দেহে সালাত (মানুষকে) অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা অবশ্যই একটি মহান কাজ। তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তায়ালা তা সম্যক অবগত আছেন”।
শব্দের অর্থ এমন সুস্পষ্ট মন্দ কাজ, যাকে মুমিন ও কাফের নির্বিশেষে প্রত্যেক বুদ্ধিমান ব্যক্তিই মন্দ মনে করে; যেমনÑ ব্যভিচার, অন্যায় হত্যা, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি।
শব্দের অর্থ এমন কথা ও কাজকে বলা হয়, যার হারাম ও অবৈধ হওয়ার ব্যাপারে শরীয়ত বিশারদগণ একমত।
মূলত এ শব্দদ্বয়ের মধ্যে যাবতীয় অপরাধ এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গোনাহ দাখিল হয়ে গেছে। যেগুলো স্বয়ং নিঃসন্দেহরূপে মন্দ এবং সৎকর্মের পথে সর্ববৃহৎ বাধা। যে ব্যক্তি সালাত কায়েম করে সে গোনাহ থেকে মুক্ত থাকে।
# কায়েম - সোজা খাড়া করা, কোন একদিকে ঝুঁকে না থাকে, রাসূল (সা.) যেভাবে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য রীতিনীতি পালন সহকারে সালাত আদায় করেছেন এবং সারাজীবন মৌখিক শিক্ষাও দান করেছেন, ঠিক সেভাবে আদায় করা, যে ব্যক্তি এভাবে সালাত আদায় করবে, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনা আপনি সৎকর্মের তরফিক প্রাপ্ত হবে এবং যাবতীয় গুনাহ থেকে বাঁচার তাওফিকও। পক্ষান্তরেÑ যে ব্যক্তি সালাত আদায় করা স্বত্ত্বেও গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে না, বুঝতে হবে, তার সালাতে ত্রুটি বিদ্যমান।
**(রাসূল (সঃ) কে ইন্না সালাত-এর অর্থ জিজ্ঞেস করা হলে) তিনি বলেন,
*“যে ব্যক্তিকে তার সালাত অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে না, তার সালাত কিছুই নয়।”                                                                                                    -আল হাদীস                                                             
** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সঃ) বলেন। যে ব্যক্তি তার সালাতের আনুগত্য করে না, তার সালাত কিছুই নয়। বলাবাহুল্য, অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকাই সালাতের আনুগত্য।
সালাতের যত গুণাবলী, ফলাফল লাভ ও বরকত হাকীকতের কথা কোরআন ও হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে, সবই “ইক্বামাতুস সালাহ’র সাথে সম্পর্ক যুক্ত।
তাই কোন সালাত আদায়কারী যদি গর্হিত কাজ হতে বিরত না থাকতে পারেÑ তবে বুঝতে হবে ঐ ব্যক্তি সালাত কায়েম/প্রতিষ্ঠা করেনি।
এছাড়া সালাত আদায়কারীকে দুনিয়াতেও পুরস্কৃত করা হবে। আখেরাতে ৫টি পুরস্কার দেয়া হবে।

# সালাত আমাদেরকে শিক্ষা দেয়-

১. নিয়মানুবর্তিতা
২. বিনয় ও নম্রতা (যদি সালাত সেভাবে আদায় করা হয়)
৩. নেতার আনুগত্য (জামাআতে সালাত)
৪. সময়ানুবর্তিতা
৫. শৃংখলা
ঘ. সৎ কাজের আদেশ-অসৎ কাজের নিষেধঃ
এ উপদেশটি মূলত “চরিত্র সংশোধন”-এর জন্য অপরিহার্য।
ইসলামে ব্যক্তির সাথে সাথে সমষ্টির সংশোধন এ জীবন-ব্যবস্থার প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ অংগ। তাই সালাতের সাথে সাথেই এ উপদেশটি দেয়া হয়েছে।

এর দুটি দিক-
১. নিজের পরিশুদ্ধি।
২. গোটা মানবকুলের পরিশুদ্ধি
 আলে ইমরান ১১০
আলে ইমরান-১০৪
“তারা তওবাকারী এবাদতকারী, শোকর গোযারকারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী এবং মন্দ কাজ থেকে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেয়া সীমা হিফাজতকারী বস্তুতঃ সুসংবাদ দাও ঈমানদারদের।”
ঙ. ধৈর্য্য ধারণ (সবর)ঃ
“তোমার উপর কোন বিপদ মুসিবত এসে পড়লে ধৈর্য্যধারণ কর।
এ আয়াতাংশে সূক্ষ্ম ইঙ্গিত রয়েছে যে, সৎকাজের হুকুম ও অসৎ কাজে নিষেধ করার দায়িত্ব যে ব্যক্তিই পালন করবে তাকে অনিবার্যভাবে বিপদ-মুসিবতের মুখোমুখি হতে হবে। ইতিহাস ও একথাই বলে যে, এ দায়িত্ব যে-ই কাঁধে নিয়ে মাঠে নেমেছে তার পেছনে দুনিয়া কোমর বেঁধে লেগেছে এবং সব ধরনের দুঃখ কষ্ট, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, উপহাস, তিরস্কার, নির্যাতন, ঠাট্টা ও তার উপর নেমে এসেছে। সেজন্য বলা হচ্ছে এ কাজে যে বিপদ মুসিবত আসবে তাতে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
বাক্বারা- ১৫৫
“এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব। কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।”
বাক্বারা- ১৫৬
যখনি তাদের সামনে (কোনো) পরীক্ষা এসে হাজির হয় তখনি তারা বলে, আমরা তো আল্লাহর জন্যই, আমাদের তো (একদিন) আল্লাহ্র কাছেই ফিরে যেতে হবে।
বাক্বারা- ১৫৩
হে ঈমানদারগণ। তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ্র সাহায্য প্রার্থনা করো।
আলে ইমরান- ১৭
এরা ধৈর্য্যশীল, সত্যাশ্রয়ী, অনুগত এবং সৎপথে ব্যয়কারী, এবং শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী।
সূরা হুদ- ১১৫
তুমি ধৈর্য্যধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা নেককারদের পাওনাকে বিনষ্ট করেন না।
আল আনফাল ৪৬
“তোমরা আল্লাহ তায়লা ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো, নিজেদের মধ্যে পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ করোনা, অন্যথায় তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের প্রতিপত্তি খতম হয়ে যাবে। (তোমরা) ধৈর্য্য ধারণ কর। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন”।
মানুষের যে কোন দুঃখ কষ্ট, সংকট ও প্রয়োজনের নিশ্চিত প্রতিকার সবর, সালাত।
**সবর এর তাৎপর্য্য**
‘সবর’ শব্দের অর্থ সংযম অবলম্বন এবং নফস এর উপর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় ‘সবর এর তিনটি শাখা আছেÑ

১.    নফসকে হারাম এবং না জায়েজ বিষয়াদি থেকে বিরত রাখা।

২.    ইবাদত ও আনুগত্যে বাধ্য করা
৩.   যে কোন বিপদে-সংকটে ধৈর্য্য ধারণ করা।
** ধৈর্যের অর্থ ঃ
১.   তাড়াহুড়ো না করা, নিজের প্রচেষ্টার ত্বরিত ফল লাভের জন্য অস্থিও না হওয়া এবং বিলম্ব দেখে হিম্মত হারিয়ে না বসা।
২.    তিক্ত স্বভাব, দুর্বল মত ও সংকল্পহীনতার রোগোক্রান্ত না হওয়া।
৩.   বাধা-বিপত্তির বীরোচিত মোকাবেলা করা এবং শান্ত চিত্তে লক্ষ্য অর্জনের পথে যাবতীয় দুঃখ কষ্ট বরদাশত করা।
৪.    দুঃখ বেদনা, ভারাক্রান্ত ও ক্রোধান্বিত না হওয়া এবং সহিষ্ণু হওয়া ও ধৈর্য্যওে একটি অর্থ।
৫.    সকল প্রকার ভয়ভীতি ও লোভ-লালসার মোকাবেলায় সঠিক পথে অবিচল থাকা, শয়তানের উৎসাহ প্রদান ও নফসের খাহেশের বিপক্ষে নিজের কর্তব্য সম্পাদন করা।
শত প্রচেষ্টার পরও বিপদাপদ চলে আসলে তাতে ধৈর্য্যধারণ করতে হবে এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর তরফ থেকে প্রতিদান প্রাপ্তির আশা রাখা কর্তব্য।
মূলত সাবের বা ধৈর্য্যধারণকারী সে সব লোককে বলা হয়, যারা উপরোক্ত তিন প্রকারেই ‘সবর’ অবলম্বন করে।
হাশরের দিন বলা হবে “ধৈর্য্যধারণকারীরা কোথায়?” এ কথার সংগে তিন প্রকার সবরকারী দাঁড়াবে যাদের বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।

বিপদে ইন্নালিল্লাহ পড়লে সওয়াব, অর্থের প্রতি খেয়াল রাখলে অন্তরে শান্তি পাওয়া যায়।
ইসলামী আন্দোলনে সবাই একই লক্ষ্যে যোগ দিলেও সবার স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য এক নয়। এক্ষেত্রে নিজ মতের বিরুদ্ধ বিষয়েও ধৈর্যধারণ এবং সহনশীলতার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।
  চ. সামাজিক শিষ্টাচার ঃ (অহংকার না করা)
মানুষ থেকে চেহারা/মুখ ফিরে রেখো না অর্থাৎ লোকদের সাথে সাক্ষাত বা কথোপকথনের সময় মুখ ফিরে রেখো না যা তাদের প্রতি উপেক্ষা ও অহংকারের নিদর্শন এবং ভদ্রতা ও সৌজন্যতার পরিপন্থি মুখতাল বলতে বুঝায় এমন ব্যক্তিকে যে নিজেকে খুব বড় মনে করে।
  (ফাখুর) বলা হয় তাকে, যে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব অন্যের নিকট প্রকাশ করে।
বনি ইসরাঈল ৩৭
“আল্লাহর যমীনে কখনোই দম্ভভরে চলো না, কেননা (যতোই অহংকার কর না কেন) তুমি কখনোই এই জমীনকে বিদীর্ণ করতে পারবে না, আর উচ্চতায়ও তুমি কখনো পর্বত সমান হতে পারবে না”।
সূরা আল আ’রাফ ১৩
“আল্লাহ তায়ালা বললেন, (শয়তানকে) তুমি এক্ষুনি এখান থেকে নেমে যাও! এখানে (বসে) অহংকার করবে, এটা তোমার পক্ষে কখনো সাজে না, যাও (এখান থেকে) বেরিয়ে যাও, তুমি অপমানিতদেরই একজন”।
আন নাহল ২৩
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ (ঝড) জানেন, এরা যা কিছু গোপন করে যা কিছু প্রকাশ করে, তিনি কখনো অহংকারীদের পছন্দ করেন না”।
আন নাহল ২৯
“সুতরাং আজ জাহান্নামের দরজাসমূহ দিয়ে তোমরা প্রবেশ কর। সেখানে তোমরা চিরদিন থাকবে, অহংকারীদের আবাসস্থল কতো নিকৃষ্ট”।
* অহংকার আনুগত্যের পথে অন্তরায়।
ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন ঃ যার অন্তরে অনু পরিমাণও অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি বলল, মানুষ চায় যে, তার পরিধেয় বস্ত্র সুন্দর হোক, তার জুতা জোড়া সুন্দর হোক তিনি বললেন, আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। সত্যকে অস্বীকার করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা হচ্ছে অহংকার। (মুসলিম থেকে মিশকাত)
# পার্থিব আরাম-আয়েশ ও ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে আল্লাহর অধিকার ও মানুষের অধিকার পদদলিত করার নাম অহংকার
ছ. মধ্য পন্থা অবলম্বনঃ
১৯ নং আয়াতের আরেক অর্থ এমন হয় “তোমার চলনে ভারসাম্য আন।”
বাক্বারা ১৪৩
“এভাবেই আমি তোমাদের এক মধ্যমপন্থী মানব দলে পরিণত করেছি, যেন তোমরা দুনিয়ার অন্যান্য সম্প্রদায়ের নিকট (হেদায়াতের) স্বাক্ষী হয়ে থাকতে পার (এবং একইভাবে) রাসূলও তোমাদের জন্য সাক্ষী হয়ে থাকতে পারে”।---

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনÑ রাসূল (সঃ) বলেছেনÑ তিনটি জিনিস মুক্তিদানকারী। জিনিসগুলো হচ্ছেÑ (১) প্রকাশ্যে ও গোপনে খোদা ভীতি অবলম্বন করা। (২) সন্তোষ ও ক্রোধ উভয় অবস্থায় সত্য কথা বলা। (৩) প্রাচুর্য ও দারিদ্র উভয় অবস্থায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করা।

# দ্রুতগতিতে চলাফেরা করলে (ক) নিজের ধপপরফবহঃ হতে পারে। (খ) অন্যের বিপদ হতে পারে।
# ধীরগতিতে চলা ৩ ধরনের ভাব প্রকাশ
১. অহংকারবশে হারাম
২. স্ত্রী লোক (লজ্জা সংকোচ) (পুরুষদের জন্য নাজায়েজ)
৩. অসুস্থতা
সুস্থ হয়েও অসুস্থতার ভান চরম অকৃতজ্ঞতা।
জ. কণ্ঠস্বর নিচু করাঃ
“তোমরা স্মরণ কর”
অর্থাৎ স্বর প্রয়োজনাতিরিক্ত উচ্চ করোনা এবং হট্টগোল করো না। হযরত উমর ফারুক (রাঃ) এমনভাবে কথা বলতেন যেন উপস্থিত জনমন্ডলী অনায়াসে তা শুনতে পান, কোন প্রকার সমস্যা না হয়।
রাসূল (সঃ) তিন বস্তু সম্পূর্ণভাবে বর্জন করেছিলেনÑ ১. ঝগড়া-বিবাদ ২. অহংকার ৩. অপ্রয়োজনীয় ও অর্থহীন কাজে আত্মনিয়োগ করা।
হুজুরাত ১-৪
১. মুমিনগণ। তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন।
২. হে ঈমানদারগণ, কখনো নিজেদের আওয়াজকে নবীর আওয়াজের ওপর উঁচু করো না এবং নিজেরা যেভাবে একে অপরের সাথে উঁচু (গলায়) আওয়াজ করো নবীর সামনে কখনো সে ধরনের উচুঁগলায় কথা বলো না, এমন যেন কখনো না হয় যে তোমাদের সব কাজ কর্ম (এই কারণেই) বরবাদ হয়ে যাবে এবং তোমরা তা জানতেও পারবে না।
৩. যারা আল্লাহর রাসূলের সামনে নিজেদের গলার আওয়াজকে নিম্নগামী করে রাখে, তারা হচ্ছে সেসব মানুষ যাদের মন মগজকে আল্লাহ তায়ালা তাকওয়ার ওয়ার জন্য বাছাই করে নিয়েছেন, আর এমন ধরনের লোকদের জন্যই রয়েছে আল্লাহর ক্ষমা ও অসীম পুরস্কার।
৪. হে নবী যারা তোমাকে (সময় অসময়) তোমার কক্ষের বাইরে থেকে ডাকে, তাদের অধিকাংশই নির্বোধ লোক।

* শিক্ষা ঃ

১.    কোন কাজে, কোন কথায় এমনকি সূক্ষ্ম কোন ব্যাপারেও আল্লাহর সাথে শরীক করা যাবে না।
        ক. লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সৎকাজ শিরকেরই অন্তর্ভুক্ত
        খ. শিরকের গুনাহ ক্ষমা করা হবে না।
২.    পিতামাতার প্রতি সদ্বব্যহার অপরিহার্য। মাতাপিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যতীত আল্লাহর কৃতজ্ঞতা অর্থহীন ও অগ্রহণযোগ্য।
৩.   অনৈসলামিক ক্ষেত্রে আনুগত্য করা যাবে না।
৪.    খুশু ও খুযুর সহিত সালাত আদায় করলে মুনকার ও ফাহেশাহ কাজ থেকে বিরত থাকা সম্ভব। এসব কিছুই “ইক্বামাতুস সালাহ” সালাত প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত।

৫.    নিজের পরিশুদ্ধি ও সমাজের পরিশুদ্ধির জন্য সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ অত্যন্ত জরুরী।

৬.    সকল বিপদ মুসিবত, নির্যাতন, জেল-জুলুমসহ সকল ক্ষেত্রে পরম ধৈর্য্যরে পরিচয় দিতে হবে।
৭.    অহংকার বশে উদ্ধতভাবে চলাফেরা করা যাবে না।
৮.    কাউকে তুচ্ছ জ্ঞান করা যাবে না।
৯.    সকল কাজে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে।
১০. দায়িত্বশীল, অভিভাবক ও সম্মানীয় ব্যক্তির সাথে উঁচু কণ্ঠস্বরে কথা বলা যাবে না।

মহান আল্লাহ তা’য়ালা আলোচ্য দারসুল কোরআন থেকে শিহ্মানিয়ে আমাদের বাস্তব জীবনে কাজে লাগানোর তৈাফিক দান করুন।
আমীন ।।

দারসুল কোরাআন-৩

দারসুল কোরাআন-৩

 বিষয় ঃ- শাহাদাত

   (ولا تقولوا لمن يقتل فى سبيل الله اموات- بل احياء ولكن لا تشعرون- (سورة البقرة
(ولا تحسبن الذين قتلوا فى سبيل الله امواتا- بل احياء عند ربهم يرزقون-(سورة ال عمران

অনুবাদ ঃ- (১)  যারা আল্লাহর পথে নিহত (শহীদ) হয় , তাদেরকে মৃত বলোনা। বরং তারা জীবিত। (আল বাকারা-১৫৪)
(২) আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের মৃত মনে করোনা। বরং তারা জীবিত ও তাদের রবের নিকট থেকে রিজিক প্রাপ্ত। (আলে ইমরান-১৬৯)
নামকরন ঃ-
নাযিলের সময়কাল ঃ-
আলোচ্য বিষয় ঃ-
 আলোচ্য আয়াত দুটিতে আল্লাহর পথে শাহাদাত বরনকারীদের বিশেষ মর্যাদার কথা বলা হয়েছে।
১ = শহীদরা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে ও পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করে।
২ = আর পরপারে যাওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ তাদের মেহমান হিসেবে গ্রহন করেন।
৩ = তারা জান্নাতে আল্লাহর নিকট থেকে রিজিক প্রাপ্ত।
ব্যাখ্যা-
শাহাদাত শব্দের অর্থ
 শাহাদাত শব্দটি আরবী এর অর্থ হলো সাক্ষ্য দেয়া, উপস্থিত হওয়া বা সফলতা লাভ করা। ইসলামে এ শব্দটি তাদের জন্য ব্যবহ্রত হয় যারা আল্লাহর দ্বীন কায়েমের পথে  জীবন দান করেন।
মৃত্যুর প্রকার ঃ-
সাধারনত মৃত্যু তিন প্রকারের-
ক = স্বাভাবিক মৃত্যু।
খ = অস্বাভাবিক মৃত্যু বা দুর্ঘটনায় মৃত্যু।
গ = শাহাদাতের মৃত্যু।
এ তিন প্রকার মৃত্যুর মধ্যে সর্ব্বোত্তম মৃত্যু হলো শাহাদাতের মৃত্যু।

চার প্রকার লোকের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ঃ- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন  চার প্রকার লোকের প্রতি অনুগ্রহ বা তার নিয়ামত প্রদানের কথা বলেছেন্ তন্মধ্যে এক প্রকার হলো দ্বীনের জন্য যারা শাহাদাত বরণ করেন।
ومن يطع الله والرسول فاولئك مع الذين انعم الله عليهم من النبين والصديقين والشهداء والصالحين وحسن اولئك رفيقا-

অর্থ ঃ- আর যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসুলের হুকুম মান্য করবে, তা হলে যাদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন , সে তাদের সঙ্গী হবে। তারা হলেন নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সৎ কর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হলো উত্তম। (সুরা নিসা ৬৯)

শহীদি মৃত্যুর জন্য পুরস্কার ঃ-
ক = অনন্ত-অসীম জীবন লাভ।
খ = মহান রবের ক্ষমা।
গ = সন্মান ও মর্যাদার অকল্পণীয উচ্ছতা।
ঘ = আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের রিযিক প্রাপ্তি।
ঙ = তাদের যে সব উত্তরসুরী দুনিয়াতে জিহাদে নিয়োজীত তাদের জন্য তারা আনন্দ প্রকাশ করে।
চ = তারা সর্বদা জান্নাতে আনন্দমুখর থাকবেন।
ছ = মহান রবের সান্নিধ্য।
জ = শহীদরা সমগ্র জান্নাত ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
কারা শাহাদাত বরণ করতে পারে ঃ-
শাহাদাতের মৃত্যু আল্লাহ সকলকে দান করেন না। বরং আল্লাহ তার বাগান থেকে যে ফুলটিকে বেশী ভালোবাসেন/ পছন্দ করেন সেটিই তিনি গ্রহন করেন।

* শহীদি মৃত্যুর জন্য যুগের শ্রেষ্ঠ মুজাহিদ ব্যক্তিরা আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন। যেমন চার খলিফার মধ্যে হযরত আবু বকর (রাঃ) ছাড়া বাকি তিনজন খলিফাই মাহাদাতের মৃত্যু লাভ করেন। রাসুল (সাঃ) আল্লাহর নিকট শহীদি মৃত্যু কামনা করতেন। কারন এই মৃত্যু- মৃত্যু নয়, বরং এটাই পরকালের মুমিন জীবনের সর্ব্বোচ্ছ চাওয়া-পাওয়া।
আল্লাহ তাদেরকেই শহীদি মৃত্যু দিবেন যারা-
ক = আল্লাহর পছন্দনীয় কিছু মুমিন বান্দাকে-
আল্লাহ বলেন-
= وليعلم الله الذين امنوا ويتخذ منكم شهداء-
অর্থাৎ ঃ- আর তিনি তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে শহীদ হিসেবে গ্রহন করতে চান। (আলে ইমরান-১৪০)
খ = যরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বেশী পেরেশান-
= ومن الناس من يشترى نفسه ابتغاء مرضات الله-
অর্থাৎ ঃ- আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জীবন বাজী রাখে। (বাকারা-২০৭)
গ = দ্বীন কায়েমের জন্য কিছু লোক শহীদ হবেন আর কিছু লোক অসমাপ্ত দ্বীনের জন্য অপেক্ষা করবেন-
যেমন আল্লাহ বরেন-
= من المؤمنين رجال صدقوا ماعاهدواالله عليه فمنهم من قضىا نحبه ومنهم من ينتظر ومابدلوا تبديلا-
অর্থাৎ ঃ- মুমিনদের মধ্যে কিছু বান্দা কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যু বরণ করেছে এবং কেউ কেউ মৃত্যুর জন্য প্রতিক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি। (আহযাব-২৩)
শহীদি মৃত্যুর ফজিলত ঃ-
 কোরআন ও হাদিসে শহিদী মৃত্যুর অনেক ফজিলতের বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন-
ক = তারা তাদের আমলের পূর্ণ প্রতিদান পাবেন।
আল্লাহ বলেন-
والذين قتلوا فى سبيل الله فلن يضل اعمالهم-
অর্থাৎ ঃ- আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিবে আল্লাহ কখনো তাদের আমল নষ্ট করবেন না। (মুহাম্মাদ-৪)
খ = তাদের সকল গুনাহ মাফ।
শহীদের রক্তের ফোঁটা মাটিতে পড়ার সাথে সাথেই মহান আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন। শুধু দেনা ব্যাতিত। ( মুসলিম)
গ = মুলত শাহাদাত হলো ঈমানী পরীক্ষার চূড়ান্ত স্তর। শাহাদাতের উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও গুনাহ মাফ-
আল্লাহ বলেন-
فالذين هاجروا واخرجوا من ديارهم واوذوا فى  سبيلى وقاتلوا وقتلوا لاكفرن عنهم سياتهم-
অর্থাৎ ঃ- যারা আমার জন্য হিজরত করেছে, নিজের ঘর-বাড়ী থেকে বহিস্কৃত ও নির্যাতিত হয়েছে এবং আমারই পথে লড়াই করে নিহত হয়েছে, আমি তাদের সকল অপরাধ মাফ করে দেব। (আলে ইমরান-১৯৫)
ঘ = শহীদদের কবরে কোন প্রকার আজাব হবে না। এবং তাদের মৃত দেহ কোনভাবেই নষ্ট হবে না।
রাসুল (সাঃ) শহীদদের দিকে সম্বোধন করে বলেন-
 তাদেরকে রক্তাক্ত দাফন কর। (বুখারী)
ঙ = শহীদরা তাদের বংশধরদের জন্য সুপারিশকারী হবেন।
হাদীসের ভাষায়-
= ويشفع فى سبعين من اقربائه-
শহীদরা তাদের আওলাদদের ৭০ জনকে গুনাহ মাফ করে জান্নাতবাসী করার সুপারিশের সুযোগ পাবে। ( সুনানু আবু দাউদ)
মুমিনের করণীয় ঃ-
মুমিনের সার্বক্ষনিক কামনা থাকবে শহীদি মৃত্যু লাভ করা। রাসুল (সাঃ) আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার প্রবল আকাঙ্খা পোষন করতেন। তিনি তার এই দুর্ণিবার আকাঙ্খার কথা ব্যক্ত করেছেন এ ভাষায়-
“কসম সেই সত্তার যার মুষ্টিবদ্ধ আমার প্রান। আমার বড় সাধ আল্লাহর পথে নিহত হই, আবার জীবন লাভ করি, আবার নিহত হই, আবার ঝীবিত হই, আবার নিহত হই, আবার ঝীবিত হই, আবার শহীদ হই”। (বুখারী)
শহীদদের অপরাধ ঃ-
কি অপরাধে শহীদদের কে হত্যা করা হয় তা আমরা  জানতে পারি কুরআনের ভাষায়-
 ومانفموا منهم الا ان يؤمنوا بالله العزيز الحميد- الذى له ملك السموات والارض-
অর্থাৎ ঃ- তাদের কাছ থেকে তারা কেবল একটি কারনেই প্রতিশোধ নিয়েছে, আর তা হচ্ছে তারা সেই মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর উপর ঈমান এনেছিল। যিনি সপ্রশংসিত ও আসমান জমিনের মালিক। (আল বুরুজ ৮-৯)
শহীদ বলার জন্য কয়েকটি শর্ত ঃ-
 যে কোন নিহত ব্যক্তিকে শহীদ বলা যাবেনা। এর জন্য কয়েকটি শর্ত প্রযোজ্য-
১ = তাকে প্রথমেই মুমিন হতে হবে।
২ = তাকে নিহত হতে হবে আল্লাহর পথে দ্বীন কায়েমে অংশগ্রহন করে।
৩ = ইসলাম কিংবা ইসলামী রষ্ট্রের হেফাজতের কাজে অংশগ্রহন করে।
কিয়ামতের দিন শহীদরা কিভাবে উঠবে ঃ-
কিয়ামতের দিন শহীদরা তাজা রক্ত নিয়ে উঠবেন। রাসুল (সাঃ) বলেন-যে, ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে, কিয়ামতের দিন সে আঘাত নিয়েই উঠবে এবং ক্ষত স্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে এবং রং হবে রক্তের মতই, কিন্তু মিশকের মত সুগন্ধিযুক্ত। (বুখারী-মুসলিম)

শিক্ষা ঃ-


    * যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয় তারা অমর।
    * শহীদরা জান্নাতে আল্লাহর মেহমান হিসেবে থাকবে।
    * শহীদদের সকল অপরাদ ক্ষমা করে দিবেন।
    * শহীদ হওয়ার সাথে সাথে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।
    * শাহাদাৎ হলো ঈমানের পরীক্ষা।
    * শহীদরা কিয়ামতের ময়দানে তার পরিবারের জন্য সুপারিশ করবে।
= দ্বীন কায়েমের জন্য কিছু লোক শহীদ হবেন আর কিছু লোক অসমাপ্ত দ্বীনের জন্য অপেক্ষা করবেন-