Saturday, November 23, 2013

দারসুল কোরআন-১

                                                                সূরা আত তাওবাহ
 আয়াত- ৩৮-৪১

 তেলাওয়াত ঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انفِرُوا فِيسَبِيلِ اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ ۚ أَرَضِيتُم بِالْحَيَاةِالدُّنْيَا مِنَ الْآخِرَةِ ۚ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِإِلَّا قَلِيلٌ (৩৮)
إِلَّا تَنفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًاغَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْئًا ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ(৩৯)
(৪০)إِلَّا تَنصُرُوهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللَّهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِينَ كَفَرُواثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لَا تَحْزَنْإِنَّ اللَّهَ مَعَنَا ۖ فَأَنزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهُبِجُنُودٍ لَّمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِينَ كَفَرُوا السُّفْلَىٰ ۗوَكَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
انفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ فِيسَبِيلِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ (৪১)
     সরল অনুবাদ ঃ
৩৮.    হে ঈমানদার লোকেরা, তোমাদের কি হয়েছে, তোমাদেরকে যখন আল্লাহর পথে বের হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তখন তোমরা যমিনের উপর বোঝায় নুয়ে পড়ছ? তোমরা কি পরকালের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে পছন্দ করে নিয়েছ? এই যদি হয়ে থাকে, তা হলে তোমাদের জেনে রাখা উচিৎ যে, দুনিয়ার জীবনের এসব সাজ-সরঞ্জাম পরকালে খুব সামান্যই বোধ হবে।
৩৯.    তোমরা যদি যুদ্ধ যাত্রা না কর, তাহলে তোমাদের পীড়া দায়ক শাস্তি দেয়া হবে এবং তোমাদের স্থলে অপর কোন লোক সমষ্টিকে (ভিন্ন আদর্শের কোন দলকে) প্রতিষ্ঠিত করা হবে, তোমরা আল্লাহর কোন ক্ষতিই করতে পারবেনা। তিনি সর্ব বিষয়ে শক্তির আধার।
৪০.    তোমরা যদি তাকে (নবীকে) সাহায্য না কর, তাহলে সেজন্য কোনই পরোয়া নেই। আল্লাহ সেই সময় তার সাহায্য করেছেন, যখন কাফেররা তাকে বহিষ্কার করে দিয়েছিল, যখন সে মাত্র দু’জনের দ্বিতীয় ছিল। যখন তারা দুজন গুহায় অবস্থিত ছিল তখন সে তার সংগীকে বলেছিলঃ চিন্তাভাবনা করোনা, আল্লাহ আমাদের সংগে রয়েছেন। তখন আল্লাহ তার প্রতি স্বীয় গভীর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাকে সাহায্য করলেন এমন সব সৈন্যবাহিনী দিয়ে, যা তোমাদের দৃষ্টিগোচর হত না এবং কাফেদের কথাকে নিচু করে দিলেন। আর আল্লাহর কথা তো সর্বোচ্চই। আল্লাহ বড়ই শক্তিমান ও সুবিজ্ঞ বিবেচক।
৪১.    তোমরা বের হয়ে পড়, হালকাভাবে কিংবা ভারী-ভারাক্রান্ত হয়ে। আর জেহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল-সামান ও নিজেদের জান প্রাণ সংগে নিয়ে; এ তোমাদের জন্য কল্যাণময় যদি তোমরা জান।
*নামকরণ ঃ
 *প্রসিদ্ধ দুটি নাম ঃ
 ১. তাওবাহ  ২. বারাআত
তাওবাহ ঃ ১১৭ নং আয়াত থেকে/ আয়াতে ঈমানদারদের গুনাহ খাতা মাফ করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শব্দার্থ- ফিরে আসা।
বারাআহ ঃ সম্পর্কোচ্ছেদ করা। ১ম আয়াতের ১ম শব্দ মুশরিকদের সহিত সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা
*শুরুতে বিসমিল্লাহ না লিখার কারণ ঃ
ইমাম রাজী লিখেছেন- নবী করিম (সা.) নিজেই এ সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ লিখেননি। এ কারণে সাহাবায়ে আজমাঈন ও লিখেননি। পরবর্তীকালে লোকেরা ও তা অনুসরণ করেছে।
* শানে নুযুল ঃ [অবতীর্ণ হওয়ার সময়কাল]সম্পূর্ণ সুরাই মাদানী যুগে অবতীর্ণ।
সূরা আত্ তাওবা নাযিলের সময়কাল: এ সূরা ৩টি ভাষনে নাযিল হয়।-
প্রথম ভাষণ: ১ম হতে ৫ম রুকুর শেষ পযর্ন্ত। এ অংশ ৯ম হিজরীর যিলক্বদ মাসে নাযিল হয়।
২য় ভাষণ: ৬ষ্ঠ লুকু থেকে ৯ম রুকুর শেষ পযর্ন্ত , ৯ম হিজরীর রজব মাসে নাযিল হয়।
তৃতীয় ভাষণ:১০ম রুকু থেকে সূরার শেষ পযর্ন্ত তাবুক যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তন কালে অবতীর্ণ হয়।
*  তাবুক অভিযান ঃ (মুতা যুদ্ধের পরের বছর) কাইসার মুসলমানদের মুতা যুদ্ধের শাস্তি দেবার জন্য সিরিয়া সীমান্তে সামরিক প্রস্তুতি শুরু করে। তার অধীনে গাসসানী ও অন্যান্য আরব সর্দারেরা সৈন্য সমাবেশ করতে থাকে।
* চ্যালেঞ্জসমূহ ঃ
১.   দেশে দুর্ভিক্ষ চলছিল? আবহাওয়া ছিল প্রচন্ড গরম।
২.   ফসল পাকার সময় কাছে এসে গিয়েছিল।
৩.   সওয়ারী ও সাজ সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা বড়ই কঠিন ব্যাপার ছিল।
৪.   অর্থের অভাব ছিল প্রকট।
৫.   দুনিয়ার দুটি বৃহৎ শক্তির একটির মোকাবিলা করতে হচ্ছিল।
*  সূরা আত্ তাওবার বিষয় বস্তু:
* বিধর্মীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে (১ম রুকু)।
* তাবুক যুদ্ধের অভিযান (৬ষ্ঠ-১০ম রুকু)।
* মুনাফিকদের পরিণাম ও পরলৌকিক শাস্তি।(৪২-৪৩,৪৭-৫৯,৬১-৬৮,৭৪-৯০,৯৩-৯৮,১০১,১০৭-১১০,১২৪ ও ১২৭ আয়াত)
*  মসজিদে জেরার নির্মাণের পরিণাম ও উহা ধ্বংস করার নির্দেশ ( ১০৮ নং আয়াত)।
* শহীদের মর্যাদা, মাহাত্ম সৎপথে অর্থ ব্যয় এর পরিণাম (১৪তম রুকু)।
মূল্য আলোচ্য বিষয় ঃ
(ক) পার্থিব জীবন ও আখেরাতের জীবনের তুলনা
(খ) আল্লাহর পথে বের না হওয়ার শাস্তি
(গ) যে কোন অবস্থায় আল্লাহর পথে বেরিয়ে পড়া।

*ব্যাখ্যা -

*৩৮ নং আয়াত ঃ
“হে ঈমানদার লোকেরা, তোমাদের কি হয়েছে, তোমাদেরকে যখন আল্লাহর পথে বের হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তখন তোমরা যমিনের উপর বোঝায় নুয়ে পড়ছ? তোমরা কি পরকালের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে পছন্দ করে নিয়েছ? এই যদি হয়ে থাকে, তা হলে তোমাদের জেনে রাখা উচিৎ যে, দুনিয়ার জীবনের এসব সাজ-সরঞ্জাম পরকালে খুব সামান্যই বোধ হবে”।
তোমাদের কি হল? তোমরা কেন বের হওনা? এ শব্দে আল্লাহ তায়ালা জিহাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে দুনিয়ার কাজে জড়িত থাকার প্রতি হুশিয়ারী প্রদান করেছেনÑ
একই প্রকার হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে সুরা নিসার ৭৫ নং আয়াতে
“তোমাদের কি হলো তোমরা কেন আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করছনা? সে সব অসহায় নর-নারী ও (দুস্থ) শিশু সন্তানদের জন্য যারা নির্যাতনে কাতর হয়ে ফরিয়াদ করছে, হে আমাদের মালিক, আমাদের এ যালেমদের জনপদ থেকে বের করে (অন্যত্র) নিয়ে যাও, অতঃপর তুমি আমাদের জন্য তোমার কাছ থেকে একজন অভিভাবক (পাঠিয়ে) দাও, তোমার কাছ থেকে আমাদের জন্য একজন সাহায্যকারী পাঠাও।
“তোমরা বেরিয়ে পড় দলভুক্ত হও, দলে দলে বেরিয়ে পড়, তোমরা যুদ্ধযাত্রা কর”                     * ইচ্ছাকালতুম,ইলাল,আরদ --  
তোমরা মাটি জড়িয়ে ধরো, মাটিকে আঁকড়িয়ে ধরো, মাটিকে অবলম্বন করে রাখো।
এখানে, দুনিয়ার লোভ লালসা, সন্তান সন্ততির ভালবাসা, দুনিয়ার চাকচিক্য ইত্যাদির প্রতি ঝুঁকে পড়ে জিহাদে যাওয়া থেকে বিরত থাকা।
রাসূল (সঃ) বলেছেন- দুনিয়ার মোহ সকল গোনাহের মূল।
আরাদিতুম বিল হায়াতিদ দুন ইয়া মিনাল আখিরাহ
তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে গেলে অর্থাৎ আখেরাতের কল্যাণের চাইতে দুনিয়ার বৈষয়িক লোভ-লালসার প্রতি তোমাদের মনোযোগ বেশী?
ফামা মাতাডুল

।          ।

অথচ নয়  ভোগসামগ্রী
অথচ দুনিয়ার জীবনের ভোগ সামগ্রী আখেরাতের তুলনায় অতি তুচ্ছ।
ক্বালিলান অতি তুচ্ছ ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে রাসূল (সঃ) তাঁর তর্জনীর প্রতি ঈঙ্গিত করে বলেন, “এ অঙ্গুলিটি কেউ সমুদ্রে ডুবিয়ে উঠালে তাতে যতটুকু পানি উঠবে, ঐ পানিটুকু সমুদ্রের তুলনায় যেমন, আখিরাতের তুলনায় দুনিয়া ও তেমন।”
এখানে আল্লাহ তায়ালা জিহাদের নির্দেশ দিয়ে বান্দাকে পরীক্ষা করে নিচ্ছেনÑ যারা দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়বে তারাই সফলকাম। সুরা আন কাবুতে ২নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- আহসিবান্নাস
‘মানুষরা কি এটা মনে করে নিয়েছে যে, তাদের (শুধু) এটুকু বলার কারণেই ছেড়ে দেয়া হবে যে, আমরা ঈমান এনেছি এবং তাদের কোন রকম পরীক্ষা করা হবেনা’।
৩৮ নং আয়াতের শেষাংশের দুনিয়ার জীবনের ভোগ সামগ্রী আখেরাতে সামান্য প্রমাণিত হবে।
এর দুটো অর্থ এরকম হতে পারে
এক ঃ আখেরাতের অনন্ত জীবন এবং সীমা সংখ্যাহীন ভোগ সামগ্রী দেখার পর তোমরা জানতে পারবে, দুনিয়ার সুখাশ্চর্য এবং বিলাস সামগ্রী আখেরাতের সীমাহীন সম্ভাবনা এবং সেই অন্তহীন নিয়ামতে পরিপূর্ণ সুবিশাল রাজ্যের তুলনায় কিছুই নয় ( (Neglegible)। তোমরা তখন আফসোস করতে থাকবে।
দুই ঃ দুনিয়ার জীবনের বিলাস সামগ্রী আখেরাতে কোন কাজে লাগবে না। এখানে যতই ঐশ্বর্য সম্পদ ও সাজ সরঞ্জাম তোমরা সংগ্রহ করো না শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সাথে সাথেই সবকিছু অকেজো হয়ে যাবে। এখানকার কোন জিনিসই তোমাদের সাথে স্থানান্তরিত হবে না। এখানকার সাজ-সরঞ্জাম, বিষয়াদি, সময়ের যে অংশটুকু তোমরা আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য কুরবানী করেছো এবং যে জিনিসকে ভালবাসার ওপর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের প্রতি ভালবাসাকে প্রাধান্য দিয়েছে একমাত্র সেই অংশেই তোমরা সেখানে পাবে।
“আন আবি উমা মাতা (রাঃ) ক্বালা ক্বালা রাসুলিল্লাহি (সঃ) মান আহাব্বা লিল্লাহি-ওয়াবগাদা লিল্লাহি ওয়া আ’তা লিল্লাহ, ওয়ামানা-আ’লিল্লাহ ফাকাদ ইছতাকমালাল ঈমান।”
অর্থাৎ - আবি উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রসূল (সঃ) বলেছেনÑ যে আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসল, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করল, আল্লাহর জন্য দান করল, আল্লাহর জন্য দান করা থেকে বিরত থাকল যে তার ঈমানকে পরিপূর্ণ করে নিল।”
এখানে অলস ও নিস্ক্রিয় লোকদের ব্যাধি ও তার প্রতিকার আলোচনা করা হয়েছে।
*৩৯ নং আয়াত -
যদি আল্লাহর পথে জিহাদে বের না হলে দুটো শাস্তির উল্লেখ করা হয়েছে ঃ
১. বড় পীড়াদায়ক আযাব (পরকালে)
২. তোমাদের স্থলে অপর কোন জাতিকে, দলকে অথবা গোষ্ঠীকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে।
(১) পরকালের শান্তি - দুনিয়ার কোন শাস্তি বা কষ্টের সাথে তুলনা চলে না। আখেরাতের আগুনের তীব্রতা দুনিয়ার আগুনের চেয়ে অনেক অনেক গুণ তীব্র। (৭০ থেকে ৭০০ গুণ) দোযখের আগুনের রং কালো
  দুনিয়ায় লালচে < নীল < সাদা < কালো (পরকালে)
আখিরাতে সবই ঈড়হঃরহঁড়ঁং কোন শাস্তির তীব্রতা দুনিয়ার মত টঢ়-ফড়হি করে না বরং টঢ় করতে পারে।
(২) অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন আজ তারই প্রমাণ।
আল্লামা ইকবাল হল সূর্যসেন হল নামকরণ, ঢা. বি. একরা শব্দটি বাদ দেয়া।
সলিমূল্লাহ মুসলিম হল থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া।
ইরাকের উপর আক্রমণ-
অন্যভাবে চিন্তা করলে-
আল্লাহর কাজ তোমাদের উপর নির্ভরশীল নয়। তোমরা করলে তা হবে আর না করলে হবে না, এমন নয়। যদি তোমরা অজ্ঞতার কারণে আল্লাহর দ্বীনের খেদমতের সুযোগ হারাও, তাহলে তিনি অন্য জাতিকে তার সুযোগ দিবেন। এবং তোমরা ব্যর্থ হয়ে যাবে। (সূরা আনকাবুত ৪/৫)
আয়াত নং -৪০
যদি তোমরা তাঁর সাহায্যে এগিয়ে না আস, তাঁর ডাকে সাড়া না দাও, তাঁর সাহায্য সহযোগিতা না কর, তাঁকে দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা না কর তবে আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন। অতীতে রাসূলের (সঃ) কঠিন সময় ও একাকীত্বে আল্লাহ কিভাবে তাকে সাহায্য করেছিলেন তার একটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।
ঘটনা ঃ রাসূল (সঃ) আল্লাহর নির্দেশে বিশ্বস্ত সহচর আবু বকর (রাঃ) কে সাথে নিয়ে হিজরত করেন। তাঁরা সাওর পর্বতের গুহায় অবস্থান করছিলেন। দুশমনরা কয়েকজন খুঁজতে খুঁজতে গিরিগুহার মুখে পৌঁছে গেলো। দুশমনদের পদধ্বনি শুনতে পেয়ে রাসূল (সঃ) এর জীবননাশের আশংকায় আবু বকর (রাঃ) বলে উঠলেন- “আমরাতো দু’জন ব্যক্তি” “এই কাফিরদের কেউ যদি তার পায়ের দিকে তাকায় তবেই তো আমাদেরকে দেখে ফেলবে।” রাসূল (সঃ) বললেন- “হে আবু বকর! তুমি ঐ দু’জনকে কি মনে কর যাদের তৃতীয়জন আল্লাহ রয়েছেন।” মোটকথা এখানেও আল্লাহ তায়ালা তার রাসূল (সঃ) কে সাহায্য করেছিলেন।
বিষন্ন হয়োনা, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেনÑ দু’শব্দের এ বাক্যটি বলা কঠিন কিছু নয়। কিন্তু এ নাজুক দৃশ্য সামনে রেখে চিন্তা করলে বুঝতে দেরী হবে না যে, নিছক দুনিয়াবী উপায় উপাকরণের প্রতি ভরসা রেখে মনের এই নিশ্চিন্তভাব সম্ভব হয়। তবুও যে সম্ভব হল তার কারণ এই কাজ সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য নিবেদিত এবং আল্লাহই হেফাজত করবেন। এর রহস্য বলা হচ্ছে ঃ
“আল্লাহ তার ক্বলব মোবারকে প্রশান্তি (সাকিনা) নাযিল করেন এবং এমন বাহিনী দ্বারা সাহায্য করেন যা তোমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি।”
আল্লাহ তায়ালা এ সাহায্যের মাধ্যমে কালেমায়ে কুফরকে দাবিয়ে দিয়েছেন এবং নিজের কালেমাকে সমুন্নত করেছেন। তিনি শিরককে নীচু করেছেন এবং তাওহীদ উপরে উঠিয়েছেন। তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করে থাকেন। তাঁর ইচ্ছার পরিবর্তন কেউ আনয়ন করতে পারে না। তাঁর সমস্ত কথা ও কাজ নিপূণতা, যুক্তি সিদ্ধতা কল্যাণ ও সৌন্দর্যে ভরপুর।
আয়াত নং ৪১
তোমরা যুদ্ধে বের হও হালকা কিংবা ভারী অবস্থায়।
শব্দ দুটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়Ñ যেমনÑ
১. হালকা ভারী
২. সশস্ত্র নিরস্ত্র
৩. অনুকুল প্রতিকুল
৪. স্বচ্ছলাবস্থায় অস্বচ্ছলাবস্থায়
৫. সুখে দুঃখে
৬. সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টিতে
৭. সমৃদ্ধির মধ্যে হোক দারিদ্রের মধ্যে হোক
৮. বিপুল পরিমাণ সাজ সরঞ্জাম থাক বা একেবারে নিঃসম্বল অবস্থায় থাক।
৯. কাজ থেকে অবসরপ্রাপ্ত হোক, কাজের মধ্যে নিয়োজিত থাক।
১০. পেশাদার হোক বা ব্যবসায়ী হোক
১১. শক্তিশালী হোক কিংবা দুর্বল হোক
১২. যুবক হও আর বৃদ্ধ হও।
অর্থাৎ সর্বাবস্থায় কোন ওযর না করেই দাঁড়িয়ে যেতে হবে এবং জিহাদের জন্য যাত্রা করতে হবে।
আয়াতের দ্বিতীয়াংশে বলা হচ্ছে তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর তোমাদের মালামাল, ধন সম্পদ দিয়ে ও তোমাদের জান প্রাণ দিয়ে এটাই তোমাদের জন্য উত্তমÑ যদি তোমরা জানতে।
এ প্রসংগে সুরা তাওবারই ১১১ আয়াতে বলা হয়েছেÑ
অর্থ -অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের কাছ থেকে তাদের প্রাণ ও ধন সম্পদ কিনে নিয়েছেন, এর বিনিময়ে তারা জান্নাত লাভ করবে। এরা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, অতঃপর (এই জিহাদে কখনো কাফেরদের) তারা হত্যা করে (কখনো আবার শত্রুর হাতে) তারা নিজেরা নিহত হয়। (মোমেনদের সাথে) এই খাঁটি ওয়াদা (এর আগে) তাওরাতে ও ইনজীলেও করা হয়েছিলো। (আর এখন তা) এই কোরআনে (করা হচ্ছে) এই ওয়াদা পালন করা আল্লাহ তায়ালার নিজস্ব দায়িত্ব আর আল্লাহর চাইতে কে বেশী ওয়াদা পূরণ করতে পারে? অতএব (হে মোমেনরা) তোমরা তাঁর সাথে যে কেনাবেচার কাজটি (সম্পন্ন) করলে তাতে আনন্দ প্রকাশ করো এবং এটি হচ্ছে এক মহাসাফল্য।
সূরা আসসাফের ১০-১৩ আয়াতে বলা হয়েছে
১০. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, আমি কি তোমাদের এমন একটি (লাভজনক) ব্যবসার সন্ধান দেবো, যা তোমাদেরকে (মহাবিচারের দিন) কঠোর আযাব থেকে বাঁচিয়ে দেবে।
১১. (ব্যবসাটি হচ্ছে) তোমরা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনবে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করবে নিজেদের ধন ও প্রাণের সাহায্যে। এটিই তোমার জন্য মঙ্গল। যদি তোমরা (কথাটা) বুঝতে পারতে।
১২. (এমনটি করলে) আল্লাহ তোমাদের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং শেষ বিচারের দিন তিনি তোমাদের প্রবেশ করাবেন এমন এক (সুরম্য) জান্নাতে যার নিচ দিয়ে ঝর্নাধারা প্রবাহিত; আর চিরন্তন জান্নাতের স্থায়ী নিবাসস্থলের সুন্দর (পবিত্র) গৃহে প্রবেশ করাবেন। এটিই হচ্ছে সবচাইতে বড়ো সাফল্য।
১৩. আরো একটি অনুগ্রহ তোমাদের একান্ত কাম্য এবং তা হচ্ছে আল্লাহর সাহায্য ও (ময়দানের) আসন্ন বিজয়। কাজেই মোমেন বান্দাদেরকে সুসংবাদ দাও।
এটা তোমাদের জন্য অতি উত্তম ঃ
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন ঃ লোকদের মধ্যে সর্বোত্তম জীবন হচ্ছে সে ব্যক্তির জীবন, যে ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরে সব সময় আল্লাহর (দ্বীন প্রতিষ্ঠার) পথে জিহাদ করার জন্য তৈরি থাকে। যেখানেই সে কোন বিপদ বা পেরেশানীর কথা শুনতে পায় সংগে সংগেই ঘোড়ার পিঠে চড়ে বাতাসের বেগে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। হত্যা ও মৃত্যুকে তার পথে খোঁজ করতে থাকে। আর দ্বিতীয় সে ব্যক্তির জীবন যে পর্বতের চূড়ায় বা উপত্যকায় কয়েকটি ছাগল সংগে নিয়ে বসবাস করে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয়, আর আমৃত্য নিজের বরের ইবাদত করে এবং মানুষের কল্যাণ ছাড়া সে আর কিছুই করে না। (মুসলিম)
* আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন ঃ জান্নাতে একশতটি দরজা আছে। আল্লাহর পথে জিহাদকারী মুজাহিদদের জন্য আল্লাহ তা তৈরি করেছেন- তার দুটি দরজার মাঝখানের দূরত্ব আসমান ও যমীনের মাঝখানের দূরত্বের সমান।
“রাসূল (সঃ) বলেন -আল্লাহ তায়ালা তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথে জিহাদকারীর জন্য এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন যে, হয় তাকে শহীদ করে জান্নাতে প্রবিষ্ট করাবেন না হয় গনীমতসহ নিরাপদে বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন।”
*জিহাদের পুরস্কার ঃ
১. গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে।
২. জান্নাত দেয়া হবে যার তলদেশে একাধিক ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। যেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
৩. আল্লাহর সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয়।
৩নং পুরস্কার আল্লাহ দিতেও পারেন নাও দিতে পারেন। যদিও দুনিয়ার জীবনে এটিই আমাদের বেশী প্রিয়।

*শিক্ষাঃ-

১. দুনিয়ার জীবনকে পরকালের উপর প্রাধান্য দেয়া যাবে না।
২. জিহাদ না করলে কঠিন শাস্তি পেতে হবে
      (ক) পরকালে কঠিন আযাব
      (খ) অন্য জাতি কর্তৃক লাঞ্ছনা
৩. আমরা জিহাদ না করলে আল্লাহ তায়ালার কোন ক্ষতি নেই।
৪. সর্বাবস্থায় আল্লাহর (ঝডঞ) উপর ভরসা রাখতে হবে।
৫. যে কোন অবস্থায় যে কোন পরিস্থিতিতে আল্লাহর পথে বের হওয়ার ডাক আসলে বের হয়ে যাওয়া ফরয।
বাস্তবায়ন ঃ
আলোচ্য দারসটিকে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হলেÑ
প্রথমত ঃ আমাদেরকে দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করতে হবে বেশি বেশি আখিরাতের কামিয়াবির কথা ভাবতে হবে।
দ্বিতীয়ত ঃ আমাদেরকে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ্র পথে জান ও মাল দিয়ে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।
তৃতীয়ত ঃ যে কোন কাজে, যে কোন অবস্থায় যে কোন পরিস্থিতিতে আল্লাহর উপর অটল অবিচল ভরসা রাখতে হবে।

No comments:

Post a Comment